ইতিহাসের পরতে পরতে ‘গতি’ বদলে দিয়েছে সভ্যতার চাকা। পালের নৌকা থেকে স্টিম ইঞ্জিন এনেছে পশ্চিমা রেনেসাঁ ও বৈশ্বিক কর্তৃত্ব। রেল সংযোগ বাড়িয়েছিল জীবনের গতি। আর আধুনিক নগরজীবনে মেট্রোরেল সৃষ্টি করেছে গতির নতুন যুগ। খুলে দিয়েছে সম্ভাবনা নতুন দিগন্ত। যার ঐতিহাসিক সূচনালগ্নে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আলোকিত বাংলাদেশ। ১৮৬৩ সালে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড চালু হওয়ার প্রায় ১২০ বছর পর উপমহাদেশে প্রথম ভারতের কলকাতায় শুরু হয় আধুনিক নগর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এ যোগাযোগ ব্যবস্থা। তারপর দিল্লি, হায়দরাবাদ, ব্যাঙ্গালুরু (নাম্মা মেট্রো) ও চেন্নাইয়েও পরে মেট্রোরেল সার্ভিস চালু হয়। পাকিস্তানের লাহরেও আছে মেট্রোরেল। দক্ষিণ এশিয়ার মেট্রোরেলের ইতিহাসে সর্বশেষ নাম উঠলো বাংলাদেশের। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্র্যানজিট (এমআরটি) প্রকল্পের অংশ হিসেবে মেট্রোরেলের ৬ নম্বর লাইনের উত্তরা (উত্তর)-আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন হচ্ছে বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে। ১১.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৯টি স্টেশন যুক্ত এই অংশ ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনছে নতুন মাত্রা। ঢাকা ও বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল প্রথম হলেও উপমহাদেশের জন্য এ যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন নয়। ঘনবসতিপূর্ণ এ অঞ্চলে মেট্রোরেল এসেছে অনেক পরে। ১৮৬৩ সালে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড চালু হওয়ার প্রায় ১২০ বছর পর ভারতের কলকাতায় শুরু হয় আধুনিক নগর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় কলকাতা মেট্রোরেলের প্রথম অংশ। ৩.৪ কিলোমিটার লাইন সে সময় যুক্ত করে এসপ্লানেড ও ভবানীপুরকে। ১৯২০ এর দশক থেকে কলকাতায় মেট্রো বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। তার প্রায় ৪ দশক পর ১৯৬৯ সালে মেট্রোপলিটন ট্র্যান্সপোর্ট প্রজেক্ট শুরু হয় কলকাতায়। ১৯৭২ সালে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ১২ বছর পর চালু হয় সিটি অফ জয় খ্যাত শহরটির প্রথম মেট্রো লাইন। বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর দুটি লাইন চালু রয়েছে। ২৪টি স্টেশন যুক্ত কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর লাইন। যার দৈর্ঘ্য ৩১.৩৬ কিলোমিটার। ২০২০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় লাইন পৌঁছেছে শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য ৯.১ কিলোমিটার। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এর বর্ধিত অংশটি হুগলি নদীর নিচ দিয়ে পৌঁছেছে হাওরায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি প্রথম নদীর নিচ দিয়ে যাওয়া বিশেষায়িত মেট্রো লাইন। আরও ৩টি লাইন যুক্ত হচ্ছে এই কলকাতা মেট্রোরেল নেটওয়ার্কে। যেগুলো সম্পূর্ণ হলে এর মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৯০ কিলোমিটার। বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর ৩০০টি গাড়ি প্রতিদিন ৭ লাখ যাত্রী পরিবহন সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। মেট্রোরেলের ম্যাগাসিটিগুলো নাগরিক বিড়ম্বনা ও যানজট এড়িয়ে গতিতে মুখর। মানুষে ভোগান্তি ও সময়ের অপচয়ের অবসান হয়েছে সেখানে। দূর হয়েছে নিকটবর্তী। ঢাকার ভবিষ্যত চেহারায় মেট্রোরেলের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আনবে গতি ও স্বাচ্ছন্দ্য। বাড়বে মানুষের কর্মঘণ্টা। বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার তীব্র গতিবেগে পা মেলাবে ঢাকা, বাংলাদেশ।