লালমনিরহাট জেলায় আগাম জাতের আলুর বীজ বপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষাণ-কৃষানীরা। দেখা গেছে, জেলার সদরের বেশ কিছু স্থানের উচুঁ জমিতে আগাম জাতের আলুর পরিচর্যা চলছে। ক্ষেতগুলোতে গাছ বেড়ে উঠে সবুজ বর্ণের রং ধারণ করছে। স্বল্প সময়ে উৎপাদন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায়, আগাম আলু চাষে এখানকার কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। অর্থকরী ফসল হিসেবে সবার ওপরে রয়েছে আলু। এ জেলায় দিনদিন আলুর চাষাবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে বড় সম্ভাবনা দেখে দিয়েছে রফতানির। তাই আলুতে লাভবান হতে চাষিদের অবশ্যই ভালো জাতের, সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিচর্যায় আলুর চাষাবাদ করতে হবে। এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উত্তরবঙ্গে আগাম আলুর চাষে মধ্যে লালমনিরহাট জেলাও রয়েছে । এ জেলার বেশ কিছু স্থানের জমি উচুঁ হওয়ায় আগাম হাইব্রীট জাতের আমন ধান কর্তনের পর পরেই নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু লাগানো শুরু হয়। ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আগাম জাতের আলুর কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে থাকে। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ডিসেম্বরের শেষে থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় নতুন আলু বাজারে আসবে। জেলা সদরের কৃষক আব্দুল মজিদ(৬০) জানায়, প্রতি বিঘায় ৮ -১০ মণ বীজ লাগে আলু রোপণের জন্য। রোপণের ৫০- ৬০ দিনের মধ্যে আলু পাওয়া যায় বিঘায় ৪৫ থেকে ৬০ মণ পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কীটনাশকসহ বীজের দাম বেড়েছে। একই সাথে শ্রমিকরা তাদের দিনমজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে । ফলে এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে লাভ কম হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি বাজারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী জাহিদ ফার্টিলাইজারে স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদ হোসেন(৪০) জানায়, প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ একর জমিতে আলু চাষাবাদ করে থাকেন তিনি। প্রতি একর জমিতে আলু চাষ আবাদ করতে ৬০০-৭০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়। এক একর জমিতে আলু আবাদ করতে ১২০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ২০০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ৪০ কেজি জিপসাম এবং ৫-৬ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কমবেশি হতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, একর জমিতে ৪-৫ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কান্দিতে মাটি তুলে দেওয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ। সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে কৃষক আজিত হাসান(৪৮) জানায়, আগাম আলুর রোগ বালাই কম হয়। সেই সাথে বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়। আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি ভালো দামের আশায়। সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, আলু চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগাম ধান কর্তনের পর কৃষকরা আলু চাষ আবাদ শুরু করেন। চলতি বছর সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮.৫ থেকে ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন জানান, জেলার প্রায় ৫০ ভাগ আলুই উৎপাদন হয়ে থাকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে। এ জেলার মাটি আলু চাষের উপযুক্ত। আলু চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসাররা মাঠে কাজ করছেন। চলতি বছরের এ জেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হবে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।