জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এবং জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস অফিস (UNDRR) যৌথভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক প্রস্তুতি, পূর্বাভাস, ঝুঁকি হ্রাস এবং দূর্যোগের সাড়াদান কার্যক্রম উন্নয়নের বিষয়ে একটি কৌশলগত সংলাপের আয়োজন করেছে।
এই সংলাপে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়াদান কার্যক্রমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। দুর্যোগকালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠী এবং কিশোরী মেয়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বিশেষভাবে আলোচনায় তুলে ধরা হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রায় ৪৫% এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঘটে, তাই অঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ-প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে বাংলাদেশ, সপ্তম এবং সর্বাধিক দুর্যোগ-প্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত না করায়, সংকটের সময় তাদের ক্ষতি এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো না পাওয়ায় তাদের ভোগান্তি অনেক বেড়ে যায়।
এই সংলাপটি দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়াদান কার্যক্রমে বিদ্যমান ফাঁকগুলো চিহ্নিত করতে এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা (SRH) এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা (GBV) থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করতে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে।
UNFPA-এর ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মাসাকি ওয়াতাবে বলেন, “দুর্যোগের সময় প্রতিবন্ধী মেয়ে ও নারীরা শোষণ, সহিংসতা এবং নির্যাতনের চরম ঝুঁকিতে থাকে; তাদের মৃত্যুর হার স্বাভাবিক ব্যক্তিদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি।” তিনি আরও যোগ করেন, “মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য ও “কুসংস্কার” দূর করতে আমাদের আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”
অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের মানবিক উপদেষ্টা হামাহ হোসেন বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার নতুন মানবিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নীতি দুর্যোগপ্রবণ সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়াদান কার্যক্রম্রক্ষেত্রে অপরিহার্য।”
এই সংলাপে উত্থাপিত সুপারিশমালা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রীকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জেন্ডার-সংবেদনশীল নীতি ও কৌশল উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সরকারি মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জাতিসংঘের সংস্থা, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় এনজিও, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, একাডেমিয়া এবং প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।