প্রতিবছর জুলাই মাসের ৩ তারিখে সারা পৃথিবীতে প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য আমাদের পরিবেশ সুস্থ রাখা এবং ভবিষ্যতে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিপরীতে অন্য কি ব্যাগ ব্যবহার করা যায় সেই ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিবসটি পালন করা হয়।
প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস পালনের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলতে হবে:
১। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করব না।
২। প্লাস্টিক ব্যাগের দিকগুলো পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবদের জানাতে হবে।
৩। পাটের ব্যাগ বা সোনালী ব্যাগ অথবা বারবার ব্যবহার করা যায় যে ব্যাগ, তা ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ রোধ হবে।
৪। পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে ব্যাগ মাটির সাথে মিশে পঁচে যেতে পারে তেমন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
৫। পরিবেশ দূষণের হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করতে হবে।
সারা পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৬০ হাজার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে এই প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করা হয়।
প্লাস্টিক ব্যাগ রিসাইকেল করা যায় না এবং ৩০০ বছরেও এই ব্যাগগুলো একই রকম রয়ে যায়। শুধু মানুষ নয়, মাছ কচ্ছপ অনেক প্রাণী প্লাস্টিকের কারণে মারা যায়। বন্যা এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পেছনেও প্লাস্টিক ব্যাগ দায়ী। পরবর্তীতে এই প্লাস্টিক বিষাক্ত কনায় পরিণত হয় যা জমি ও পানিতে প্রবেশ করে খাবারের মাধ্যমে প্রাণীদেরকে ধ্বংস করে। যেহেতু প্লাস্টিক ধ্বংস হয় না বা অপচনশীল, এগুলো জমির উর্বরতা কমায় এবং নদী ও সাগরের গভীরতা কমায়। নদী থেকে মাছ ০.৫ মাইক্রণ পর্যন্ত কেটে কেটে প্লাস্টিক খেয়ে নিজের শরীরের মধ্যে রিয়্যাকশন তৈরি করছে। যে রিয়্যাকশনের ফলে ভবিষ্যতে ওই মাছ খেলে মানুষের শরীর ক্যান্সার সহ অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাছ ছাড়াও আমরা প্লাস্টিকের যে বোতলে ডিম্পোজেবল ড্রিংকিং ওয়াটার খাই, সূর্যের আলো পড়লে তাতেও একটা রিয়্যাকশন তৈরি হয়। এটা শরীরের মধ্যে ক্ষতিকর টাইনি প্লাস্টিক-পার্টিকেল তৈরি করে। মাইক্রোপ্লাস্টিকসমূহ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে খাবার এবং বাতাসের মাধ্যমে। এর ফলে মানুষ রোগাক্রান্ত হয় এবং মানুষের শরীরে কোষসমূহ বৃদ্ধি পায় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যা ভবিষ্যতে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এছাড়াও শ^াসকষ্ট, মানসিক রোগ, উদ্বিগ্নতা, এজমা এবং বিষন্নতায় মানুষ ভুগে থাকে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে যে মাইক্রোপ্লাস্টিক টা শরীরের মধ্যে ঢুকছে, এটা বন্ধ করা জরুরি এবং প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে খালবিল ভরাট হওয়াও বন্ধ করতে হবে। বছরে প্রায় আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এখন যার প্রায় ৬০% নদীতে, খালে-বিলে চলে যাচ্ছে। এতে নদী দূষিত হয়ে যাচ্ছে, এবং ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে একসময় পরিস্কার ও পরিবেশ উপযোগী পানি পাওয়া যাবে না। যেসকল প্রাণি পানিতে বসবাস করে তাদেরও মৃত্যু ঘটবে, অর্থাৎ জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে। প্রকৃতি ও জীবনও ধ্বংস হবে। সুতরাং আমি মনে করি যে, প্লাস্টিকের যেকোন পাত্র বা ব্যাগ, অথবা প্লাস্টিকের বোতলগুলো কীভাবে ডিম্পোজ করা যায় এই বিষয়ে গুরুত্বসহকারে চিন্তাভাবনা করা উচিৎ। প্লাস্টিক রিসাইকেল করার পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা করা উচিত যেন পরিবেশ দূষণ থেকে প্রাণীকূল ও জীববৈচিত্রকে রক্ষা করা যায়। প্লাস্টিকের এই ক্ষতিকর দিকের কথা চিন্তা করে সকল মানুষের স্লোগান হওয়া উচিত, প্লাস্টিক বর্জন করুন, পরিবেশ রক্ষা করুন।
—————————————-
লেখকঃ অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ, সদ্য সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ও সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন।