প্রতি বছর ১১ই জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যাদিবস পালিত হয়। উদ্দেশ্যজনসচেতনতা এবং জনসংখ্যা বিষয়গুলোর উপরে গুরুত্ব দেওয়া। যে ১০ টি দেশের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে চায়না, ইন্ডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র আছে এবং অষ্টম নম্বরে আছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে সারা পৃথিবীর জনসংখ্যা হল ৮১১ কোটি ৮৮ লক্ষ ৩৫ হাজার ৯৯৯। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ১ হাজার ২১১ জন। বাংলাদেশের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে ১.০১%। সারা বিশ্বের সবচেয়ে কম জনসংখ্যা প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ প্রুভালু। এই দ্বীপের জনসংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৯ জন। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ১১ই জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়৷ বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, জনসভা ও সম্মেলনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর যা ২০০৬ সালে ছিল ৬২ বছর। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য সুন্দরভাবে জীবন যাপন করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যাই হোক না কেন – জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিকতা সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য। উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। এই সকল দেশে গড় আয়ু উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় ২০ বছর কম। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলেই একটি দেশ উন্নতির চরম শিখরে যেতে পারে। একটি পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তোলা দেশের প্রয়োজনে অতীব জরুরী। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমান অধিকার; সুতরাং নারীদের কেও পুরুষের ন্যায় প্রতিটি কাজে এগিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে যেন লিঙ্গ সমতা, শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ, বেকারত্ব দূরীকরণ এবং পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তোলাই এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা জাতীয় জনসংখ্যা দিবস পালনের প্রতিপাদ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে মহিলাদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছেন; তার মধ্যে স্নাতক পর্যন্ত মহিলাদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান, বিধবা ভাতা প্রদান, বিভিন্ন চাকরিতে মহিলাদের অগ্রাধিকার প্রদান এবং মহিলাদের উন্নয়ন ও অধিকার নিশ্চিত করেছে৷ মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য সারাদেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিনামূল্যে প্রায় ৩০ টি ওষুধ গ্রামীণ জনগণকে করা হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উঠান বৈঠক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকাগণ ঘরে ঘরে মায়েদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এসব কিছুর ফলে বর্তমান সরকারের আমলে মাতৃ মৃত্যুর হার এবং শিশু মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। এছাড়া দরিদ্র মানুষের জন্য ভিজিএফ কার্ড প্রদান করা হয়েছে। জনসংখ্যা দিবস পালনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা, দারিদ্র দূরীকরণ, লিঙ্গ সমতা, মানবাধিকার এবং মায়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে প্রায় ১ হাজার কোটি। এ অবস্থায় এখন থেকেই পরিবেশ দূষণ রোধ করে পরিকল্পিতভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ব্যবস্থাপনা করার লক্ষ্যে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত
লেখক: সদ্য সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধ ুশেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়; ও সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন।