বিগত সরকারের আমলে গত ১৪-১৫ বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ঋণ খেলাপির নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্প থেকে মেগা প্রকল্পসহ সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছায়া ছিল। আমরা দেখেছি যিনি ঋণ খেলাপি, তিনিই কর খেলাপি আবার তিনিই অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজ। অতীতে দেশের বিচার ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রটেকশন দিয়েছে। এস আলম বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে সালিশি মামলার যে হুমকি দিয়েছে তা নৈতিকতা বিবর্জিত। নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব কথা না বলে দেশে ফিরে এসে বললে ভালো হয়। শাস্তি প্রদানের জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ব্যাংক ধসিয়ে দেয়ার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তার এই হুমকিতে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনেক দুর্বলতা ছিলো। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন হোটেলে বসে সুদ হার নির্ধারণ করে দিতো। সেই সুদহারই বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিতো। কিছু কিছু আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা মিলে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল। আমাদের এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে হবে। আশাকরি আর্থিক খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশিত হলে অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের নাম বেরিয়ে আসবে।
আজ রাজধানীর এফডিসিতে আর্থিকখাতের বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি অয়োজিত ছায়া সংসদে সানেম এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে আর্থিক খাতের যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কল্পনারও বাইরে। এত অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি আর কোথাও হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। মিথ্যা উনয়নের গল্প শুনিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা। জিডিপি’র মিথ্যা পরিসংখ্যান দেখিয়ে জনগণের সাথে ধোকাবাজী করেছে। টাকা ছাপিয়ে কৃত্রিমভাবে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিল পতিত সরকার। আমাদের রাজনীতি, ব্যবসা আর বিনিয়োগ একাকার হয়ে যাচ্ছে। যিনি ব্যবসায়ী, তিনিই বাণিজ্য মন্ত্রী, যিনি রাজনীতিবিদ তিনিই ব্যবসায়ী সমিতির নেতা। ফলে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে এসে নিজেদের স্বার্থে নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে। জাতীয় সংসদ ও রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। পোশাক কারখানার যে মালিক সংসদ সদস্য, তিনিই যদি শ্রমিকদের অধিকারের আইন প্রণয়নের সাথে যুক্ত থাকেন, তাহলে সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাধা তৈরি হতে পারে।
জনাব কিরণ আরো বলেন, আমরা এলডিসি’র গ্রজুয়েশনের ফাঁদে পড়েছি। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরোণের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, তা বাস্তবমুখী নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতি নই। শুধুমাত্র উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নেয়া হচ্ছিল। কৃত্রিমভাবে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিগণিত করা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলডিসি’র গ্রাজুয়েশন নিয়ে বিগত সরকারের যে কর্মপরিকল্পনা ছিল তা ভালো করে পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আশা করি।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি একটি শিল্প গ্রুপের মালিক নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছে। এস আলম গ্রুপের এই কর্ণধার তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক ভিত্তিহীন ও উস্কানিমুলক বক্তব্য দেওয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন। যেহেতু সিঙ্গাপুর সরকার কোন দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনা। তাহলে নিশ্চয়ই তিনি বাংলাদেশী পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। তাই গোয়েন্দা সংস্থা ও সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জানা দরকার জনাব সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি কবে দেশ ছেড়েছেন। তখন কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন। যদি তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েও থাকেন, তারপরও যেহেতু তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সালিশি মামলা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাই তার বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক দখল ও অর্থপাচারের অভিযোগের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রতিযোগিতায় সরকারি তিতুমীর কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ, সাংবাদিক শাহ আলম খান, সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।