সৌন্দর্যমন্ডিত হাতিরঝিল খ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মফিজ লেকের নাম পরিবর্তন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র নামানুসারে ‘মীর মুগ্ধ সরোবর’ করা হবে। গত শুক্রবার সন্ধা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নকীব মুহাম্মদ নসরুল্লাহ সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই লেকের নামকরণে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের কোনো শহীদদের নাম ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যার সময় ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ চলাকালীন খাবার পানি এবং বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। তার মৃত্যুর পর একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় ‘ভাই পানি লাগবে কারও, পানি’ কথাটি তিনি বারবার বলছিলেন। আন্দোলনের সময় এভাবে মুগ্ধের শহীদ হওয়া বাংলাদেশের মানুষের মনে ক্ষতের সৃষ্টি করে। এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, মীর মুগ্ধ ছিলেন জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক। জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে সামনে যাতে আমাদের মাঝে এই স্পিরিট থাকে সেজন্যই এই নামকরণ। এছাড়াও তিনি বলেন, মফিজ লেক একটি অসঙ্গতিপূর্ণ নাম যা কোন পরিচয় বহন করে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, মফিজ লেককে মীর মুগ্ধ সরোবর নাম রাখা প্রশংসনীয় ও গৌরবের বিষয়। এর মাধ্যমে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে সবসময় সজাগ থাকতে পারবো। তাছাড়া মফিজ লেকে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধেও এমন নাম আমাদের সচেতনতা শিখাবে। এদিকে লেকের নামকরণের ক্ষেত্রে মুগ্ধের নাম ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কুষ্টিয়া অথবা ঝিনাইদহ অঞ্চলের কোনো শহীদের নামে এই লেকের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন। ইসমাইল হোসেন অর্নব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শুনেছিলাম কুষ্টিয়াতে দুইজন শহিদ হয়েছিল। তাদের নামে করাটা যৌক্তিক। মুগ্ধর নামে অলরেডি একটা ফাউন্ডেশন হয়েছে। কয়েকটি জায়গার নামও রাখা হয়েছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে কারো প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই এই স্থান দিয়ে লেক প্রবাহিত হওয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেই সময়ে এই লেকটির নামকরণ করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় লেক বা সংক্ষেপে ইবি লেক। কিন্তু মফিজ লেক হিসাবে জনপ্রিয়তার পিছনে লোকমুখে কিছু কল্পকাহিনী শোনা যায়। মফিজ নামের এক অজ্ঞাত পাগল প্রেমিক তার প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসার প্রমান দিতে অথবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এই লেকে আত্নহুতি দিয়েছিলো। এরপর থেকেই ক্রমান্বয়ে এই লেকটি মফিজ লেক হিসাবে জনপ্রিয়তা পায়। আবার কেউ কেউ বলেন, যারা অযথা প্রেম করে সময় নষ্ট করতো, তারা এখানে এসে গল্প করতো। তাদেরকে ব্যঙ্গ করে মফিজ বলে ডাকতে ডাকতে এই জায়গাটি মফিজ লেক বলে পরিচিতি পায়।