করোনার কারণে ২ বছর বন্ধ থাকার পর গাজীপুরের টঙ্গীতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা।
৫৭তম আয়োজনের প্রথম পর্ব চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি সমবেত হয়েছেন রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে। এখানে বিশ্বের বড় বড় ইসলামী পণ্ডিত বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত। তিরিশের দশকে হজরত মওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ইজতেমার উদ্ভব হয়। বাংলাদেশে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে বর্তমান কাকরাইল মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে। এরপর ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর হাজি ক্যাম্প-সংলগ্ন মাঠে। ১৯৫৮ সালে তৃতীয় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। এরপর থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বর্তমান জায়গায়ই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৭তম সমাবেশ। এই মহতী সমাবেশ এখন মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়া একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা ও দেশের বিশিষ্টজনরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছেন, এবারো নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরা দেখছি, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশটি প্রতি বছর সম্পন্ন হয়ে আসছে। লাখ লাখ মুসল্লির ইজতেমায় যাতায়াত নিয়ে কিছু ভোগান্তি থেকে যায়। কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমাস্থলে যাতায়াতে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আমরা আশা করছি এতে যাতায়াত সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তরফে ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। যাতায়াত ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই বিশাল জমায়েতে স্বাস্থ্যসেবা, পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবরকম সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারে শীতে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাদের সুস্থতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ভিন দেশ থেকে যেসব মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন তারা আমাদের অতিথি, তারা যেন কোনোরকম প্রতারণা বা বিড়ম্বনার শিকার না হন সেদিকেও সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন ইসলামের শান্তির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার এই বৃহৎ সম্মেলনটি খুবই তাৎপর্যবহ। আমরা বিশ্ব ইজতেমার নির্বিঘ্ন ও সফল সমাপ্তি প্রত্যাশা করি।