চট্টগ্রামে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিকের গন্ডি পার না হলেও তারা নিজেদের তৈরি করছে ‘নেতা’র স্টাইলে। গ্রুপ বেঁধে যায় নেতার কাছে। আবার ওই নেতার নির্দেশে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে মারামারি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। কথিত নেতাদের প্রশ্রয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব শিক্ষার্থী। আর এই কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টারে পড়ার নামে বাসা থেকে বের হয়ে নানা ধরনের কিশোরের সঙ্গে পরিচয়, চলাফেরায়।
জানা যায়, নগরীর চকবাজার, জামালখান এলাকায় কোচিং সেন্টারে পড়ার নামে বিভিন্ন আড্ডায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে এক সময় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থী। এরপর নিজেরাই একটি গ্রুপ তৈরি করে স্থানীয় কোনো কথিত ‘বড়ভাই’য়ের শেল্টারে কাজ করে। নানা সময়ে সুবিধা-অসুবিধায় কথিত ‘বড়ভাই’দের কাছে গিয়ে নিজেদের সঁপে দেয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নানা অপরাধে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ছুরি, চাকু, হকিস্টিক। তাদের ব্যবহার করে শোডাউন দিয়ে কথিত বড়ভাইয়েরা মূলত চঁাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভ টিজিং, আধিপত্য বিস্তার করে। আবার অনেক সময় এক ‘বড়ভাই’ থেকে সরে অন্য ‘বড়ভাই’য়ের কাছে গেলে রোষানলের শিকারও হতে হয়। কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আমাদের কাজ কোনো শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে এলে পাঠদান করা। তারা যদি কোচিং সেন্টারের নামে অন্য কোথাও গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তা তো আমাদের জানার কথা নয়। পরিবারকে এসব বিষয় দেখতে হবে এবং ছেলে কার সঙ্গে মেশে সেই খোঁজ রাখতে হবে। অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায় নানা অপরাধে জড়ায় বড়ভাইয়ের ছত্রছায়ায়। কিন্তু তাদের কিছু বলা যায় না, কারণ তাদের মদদদাতা হিসেবে আছেন রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা এবং প্রভাবশালী। এসব বড়ভাইয়েরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জমি দখল, মারামারি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যবহার করে। এসব কাজে শিক্ষার্থীদের বাধা দিলে তারা ওইসব বড়ভাইদের মাধ্যমে আমাদের ওপর অত্যাচার চালায়। তাই অনেক সময় দেখেও না দেখার মতো চলতে হয় আমাদের। সম্প্রতি কিশোর অপরাধী চক্র বা কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগে নগরের চকবাজার এলাকা থেকে ১৭ বছরের কম বয়সী ৭ কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। গ্রেফতারকৃত ৭ কিশোরই নগরের বিভিন্ন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। ‘ডট গ্যাং’ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তারা। তাদের গ্রুপে তিনটি স্কুলের প্রায় ৪০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ফেসবুকে প্রকাশ্যে অপরাধকর্মের বিবরণ শেয়ার করে নিজেদের বীরত্ব প্রকাশ করে তাদের ‘গ্যাং লিডার’ হোসাইনুল আমিন মিম। সে আগে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। নগরীর চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। এরপর লেখাপড়া ছেড়ে চলে যায় চকরিয়ার বদরখালীতে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করত। র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সদর কোম্পানি কমান্ডার মাহফুজুর রহমান জানান, চকবাজারে অন্তত পাঁচটি গ্রুপ আছে। আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের মদদদাতা হিসেবে যাদের নাম আসছে, তাদের কয়েকজনের ওপর নজরদারি শুরু করেছি। সম্পৃক্ততা পেলে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।