ঢাকা, শুক্রবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

ছাদ কৃষির সম্ভাবনা

ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের টান এবার খাবারের পাতে এসে পড়েছে। যা বাড়ির পাশে পড়ে থাকা জমিতে আবাদ এবং ছাদ কৃষি বিষয়টি এনেছে সামনে। সরকারও এমন পতিত জমি খুঁজে চাষ শুরুর কার্যক্রমে নেমে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদা মেটানো ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল সর্বপ্রথম দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে প্রত্যেককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শুধু আহ্বান জানিয়েই থেমে থাকেননি। সরকারি বাসভবনে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। মাটি ও ফসলের সংস্পর্শে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। দেশের খাদ্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর শখের কৃষি সবার জন্য শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক হবে। ঢাকা শহরের ৭০ ভাগ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ। এই ছাদগুলোকে অনায়াসেই সবুজ করা যায়। আর তাতে নগরীর প্রতিটি বাড়ির ছাদ হয়ে উঠতে পারে একখণ্ড সবুজ বাগান। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ছাদের বাগান থেকে নিজের পারিবারিক ফল-মূল, শাকসবজির ছাহিদা মিটিয়ে আয় করাও সম্ভব। স্যাটেলাইট যুগে শিশুদের মানসিক বিকাশেও এ ধরনের বাগান ভূমিকা রাখছে। যে কেউ দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে সামান্য সময় ব্যয় করেই করতে পারে একটি সুন্দর সবুজ ছাদ বাগান। আশার কথা হলো, বাসা-বাড়ির ছাদে বাগান করলে ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। যদিও নাগরিকরা পাচ্ছে না কর ছাড়। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছপালার মাধ্যমে সবুজায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রুফ গার্ডেন সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অবকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাণ জমি নষ্ট হচ্ছে তা কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে রুফ ছাদ বাগানের মাধ্যমে। ছাদে বাগান করার সময় প্রথমেই ছাদের আয়তন অনুসারে কাগজে-কলমে খসড়া ম্যাপ করে বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনের কলামগুলো চিহ্নিত করে নিতে হবে। ছাদে স্থায়ী বাগান করতে হলে প্রথমেই দুই ইঞ্চি পুরু করে অতিরিক্ত একটি ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশিং দিতে হবে। ছাদের ওপর ভবিষ্যতে আরো ছাদ দেয়ার সম্ভাবনা থাকলে স্থায়ী বেড না করে টব বা ড্রামে বাগান করাই উত্তম। ছাদ যেন ড্যাম্প বা স্যাঁতসেঁতে না হয় সে জন্য রিং বা ইটের ওপর ড্রাম অথবা টবগুলো স্থাপন করা যায়। ছাদে খুব অল্প পরিশ্রমে যেসব শাকসবজির চাষ করা যায় তা হলো- করলা, টমেটো, করলা, ঢেঁড়শ, চিচিংগা, ঝিংগা, পুঁই শাক, চালকুমড়া, কলমিশাক, মুলা, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, কচু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রুকলি, গাজর, ডাঁটা, লাল শাক ইত্যাদি। এসব শাকসবজির জন্য তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। তবে নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে পানি দিতে হবে। বীজ লাগানোর আগে মাটি প্রসেসের সময় জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। পরে মাঝে মাঝে মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে সামান্য খৈল পচা পানি দিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় যে যেখানে পারি বেশি করে সবজি চাষ করি। এ ক্ষেত্রে অনাবাদি জমিতে, পতিত জায়গায়, রাস্তার পাড়ে, পুকুর পাড়ে, নদীর পাড়ে, টিনের চালে, বাড়ির আঙ্গিনায়, ভাসমান পদ্ধতিতে। এছাড়া পরিবেশ রক্ষা ও নগরীর তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে বাড়ির ছাদে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, ফুটপাত, পার্ক, সরকারি খাস ভূমি প্রতিটি পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে উদ্যান ফসল ও বাহারি ফুল গাছের সমন্বয়ে তৈরি করতে হবে সবুজ নগরায়ণ। এতে পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি, মানসিক শান্তি ও অর্থনৈতিক আয়ের উৎস হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

লেখক : উপ-পরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Tweet about this on Twitter
Twitter
Email this to someone
email
Print this page
Print
Pin on Pinterest
Pinterest

দৈনিক নবচেতনার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন