আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস ২০২৩ । বাংলাদেশসহ বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার সদস্যভুক্ত ১৭৯ টি দেশে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করা হবে দিবসটি।১৯৮৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শুল্ক সহযোগিতা পরিষদের আহ্বানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।’বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শুল্ক সহযোগিতা পরিষদের সদস্য হিসেবে ১৯৯৩ সাল থেকে দিবসটি পালন করে আসছে।১৯৫০ সালের একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী গঠিত হয় আন্তর্জাতিক শুল্ক সহযোগিতা পরিষদ।১৯৫৩ থেকে এই পরিষদ কাজ করছে। ১৯৫৩ সালের ২৬ জানুয়ারি পরিষদ তার কর্মকাণ্ড শুরু করে বিধায় এইদিনকে ঘোষণা করা হয় আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস।জাতীয় বাণিজ্য চর্চা ও নীতিতে নানাবিধ অনিয়ম, অসমতা ও অসঙ্গতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অব্যবস্থা নিরসনকল্পে বিশ্ব শুল্ক পদ্ধতিকে সুষমকরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করাই আন্তর্জাতিক শুল্ক পরিষদের কাজ। বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মূল্য সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। ১৯৪৭-এ একটি আন্তঃসরকার শুল্ক সমন্বয়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়। ১৯৫২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাস্টমস কো অপারেশন কাউন্সিলের গোড়াপত্তন হয়। ১৯৫৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারী ব্রাসেলসে প্রথম কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে এই সংগঠনের নাম বিশ্ব শুল্কসংস্থা নির্ধারণ করা হয়। ১৯৫৩ সালে অনুষ্ঠিত এই সংস্থার প্রথম অধিবেশনের স্মরণে প্রতি বছর আজকের এই দিনে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস পালন করা হয়।আমাদের দেশের শুল্ক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হয়নি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমদানী রপ্তানী সহজীকরণ হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।চলতি ২০২২-২৩ করবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর, স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক মিলে মোট রাজস্ব আয় করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা বিগত করবর্ষের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। গত করবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এনবিআর সূত্র জানায়, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো-পাঁচ মাসে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তবে এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কিছুটা পিছিয়ে আছে। পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ করবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৮১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা চলতি করবর্ষের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত করবর্ষের পাঁচ মাসে এ খাত থেকে রাজস্ব আয় ছিল ৩০ হাজার ৪১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। শুল্ক ও আয়করের মত মূসক রাজস্ব আয়েও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। গত করবর্ষের পাঁচ মাসে মূসক রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এবার সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।উল্লেখ্য, চলতি করবর্ষে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।সরকারের বিভিন্ন সূত্র দাবী করছে, রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ও অন্যান্য দেশের সীমান্ত সংস্থার মধ্যে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বৈধ বাণিজ্যকে নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে সরকার। এক্ষেত্রে সহজে ও স্বচ্ছন্দে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়রানিমুক্ত শুল্ক বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার ওপর তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরাপদ বাণিজ্য পরিবেশ অপরিহার্য্য। এতে করে কাস্টমস বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও গতি আসবে। আর নিরাপদ বাণিজ্য পরিবেশ নিশ্চিত করণে কাস্টমসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথা আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে একটি অবাধ, সমতামূলক ও নিরাপদ পরিবেশ গঠনে তাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সত্যি বলতে কি, বর্তমানে আমাদের বাজেটের ৯০ শতাংশের বেশী ব্যয় মেটানো হয় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ থেকে। আর এই অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ে কাস্টমসের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই শুধু রাজস্ব আহরণ নয়, পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার সাথেও সমন্বয় করে বাংলাদেশের সীমান্তকে নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কাস্টমস।
> শুল্ক আদায় ইসলামের দৃষ্টিকোণ:-
সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে যে সকল বিদেশী পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলো বিক্রয় করা নাজায়েয হবে না। তবে সরকারের দৃষ্টিতে এ কাজটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ তাই এ ধরনের পণ্য বিক্রয় না করার মাঝেই সতর্কতা রয়েছে। কারণ, কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, অর্থ ‘নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫]তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম ৩/৩২৩-৩২৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৯৯ আর ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থ বিভাগকে বায়তুল মাল বলা হয়। বাইতুল মালের আমদানির যেসব মাধ্যম নির্ধারিত আছে, সেগুলো হলো—জাকাত, উশর, খিরাজ, জিজিয়া, মালে ফাই, মালে গনিমত ও হারিয়ে যাওয়া সম্পদ। এগুলো ছাড়া জনগণের ওপর শুল্ক নির্ধারণের ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত সংবেদনশীল। সাধারণ অবস্থায় শুল্কারোপকে জুলুম সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে কখনো যদি দেশের ওপর এমন পরিস্থিতি আপতিত হয় যে দেশ ও জনগণের সামগ্রিক প্রয়োজন পুরা করার জন্য বাইতুল মালে যথেষ্ট অর্থ মজুদ নেই, তা হলে সেই পরিস্থিতিকে একটি বিশেষ অবস্থা সাব্যস্ত করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনের ওপর সীমাবদ্ধ থেকে ট্যাক্স ধার্য করার অনুমতি ইসলামিক স্কলাররা দিয়েছেন। পরিভাষায় একে ‘জরিবাতুন নায়েবাহ’ (সাময়িক কর) বলা হয়। কিন্তু এর অনুমতি থাকবে তখন, যখন শাসকবর্গ আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা থেকে বিরত থাকবেন এবং সৎনিয়তে প্রয়োজন মেটানোর জন্য ট্যাক্স আরোপ করবেন।
তবে ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে যেন জুলুম না হয়, সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মাক্স গ্রহণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ২৯৩৯)
সাধারণত ‘মাক্স’-এর অনুবাদ করা হয় ‘ট্যাক্স’। এর ভিত্তিতে কখনো কখনো মনে করা হয় যে এই হাদিস সব ধরনের ট্যাক্স গ্রহণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হচ্ছে ‘মাক্স’-এর ব্যাখ্যা মুহাদ্দিস ও ফকিহগণ ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় করেছেন। ইমাম আবু উবায়েদ কাসেম ইবনে সালাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, এ ধরনের প্রথা জাহেলি যুগে ছিল। আরব-অনারবের সব রাজা-বাদশা এই কাজ করতেন। তাঁদের নিয়ম ছিল, যখন ব্যবসায়ীরা তাঁদের এলাকার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হতো, তখন তাদের কাছ থেকে তাদের সম্পদের দশমাংশ উসুল করে রাখতেন। (আল-আমওয়াল, আবু উবায়েদ : বর্ণনা নম্বর : ১১৩১)ইমাম তাহাভি (রহ.) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, যে শুল্ক রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের থেকে নির্মূল করে দিয়েছেন, তা ছিল সেই উশর (দশমাংশ), যা জাহেলি যুগে উসুল করা হতো। (শারহু মাআনিল আসার : ৪/২৫৩)ইমাম গাজ্জালি (রহ.) এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। প্রথমত, তিনি সেই সব শাসকের নিন্দা করেছেন, যারা তাদের ফৌজের আরাম-আয়েশ এবং বিলাসিতার জন্য ট্যাক্স আরোপ করে। তারপর তিনি ট্যাক্স আরোপের জন্য নিম্নবর্ণিত শর্তাবলি উল্লেখ করেছেন—
ক) শাসক এমন হতে হবে, যাঁর আনুগত্য করা ওয়াজিব।
খ) দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রকৃতপক্ষেই প্রয়োজন দেখা দিতে হবে।গ) বাইতুল মাল অর্থশূন্য হতে হবে।
ঘ) এতটুকু ট্যাক্সই আরোপ করা যাবে, যতটুকু প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট হয়।
ঙ) জনগণের ওপর ট্যাক্স বণ্টনের ক্ষেত্রে ইনসাফ অবলম্বন করতে হবে। এমন যেন না হয় যে একজনের ওপর অনেক ট্যাক্স ধার্য করা হলো, অথচ তার মতো আরেকজনের ওপর ধার্য করা হয় এর চেয়ে কম।যেহেতু সমকালীন শাসকবর্গ থেকে এই শর্তগুলো যথাযথভাবে পালিত হওয়া মুশকিল মনে হয়, এ জন্য উলামায়ে কেরাম সব সময় এ ধরনের ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহ করেছেন। প্রয়োজনের সময় কড়া শর্তে অনুমতি দিয়েছেন। যখন তাতারিরা মুসলিমবিশ্বে হামলা করে বসে, এবং যুদ্ধের খরচ মেটানোর জন্য সুলতানের সম্পদ প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু ঋণ নিতে চান এবং কিছু কর আরোপ করতে চান। এর জন্য তিনি উলামা ও কাজিদের সমাবেশ ডাকেন। সে সময় উলামায়ে কেরামের শিরোমণি ছিলেন হজরত শায়খ ইজজুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম (রহ.)। তিনি সুলতানকে সম্বোধন করে বলেন, যখন দুশমন মুসলিম দেশের ওপর হামলা করে বসবে, তখন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সব মুসলমানের জন্য ফরজ। যতটুকু সম্পদ হলে আপনি যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারবেন, ততটুকু আপনি জনগণ থেকে উসুল করতে পারেন। (আন-নুজুম আজ-জাহেরা : ৭/৭২-৭৩, তাবাকাতুশ শাফেয়িয়া : ৮/২১৫)সারকথা হচ্ছে, প্রকৃত প্রয়োজনের সময় প্রয়োজন অনুপাতে ট্যাক্স আরোপের অনুমতি সবাই দিয়েছেন। বরং ইমামুল হারামাইন আল্লামা জুওয়াইনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজামুল মালিক তুসির নির্দেশে যে কিতাব লিখেছেন, সেটি ‘আল-গিয়াসি’ নামে প্রসিদ্ধ। তার ভেতর তিনি এ বিষয়ে কয়েক পরিচ্ছেদে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে যদি বাইতুল মালের স্বতন্ত্র প্রয়োজন থাকে, তাহলে ভিন্নভাবেও এ ধরনের ট্যাক্স আরোপ করা যেতে পারে। (গিয়াসুল উমাম ফি ইলতিয়াসিজ জলাম, জুওয়াইনি : ২৫৬-২৮৬)কিন্তু এ বিষয়টি জায়েজ হওয়ার পরও যাতে এই সুযোগের কোথাও ভুল ব্যবহার না হতে পারে, এ জন্য উলামায়ে কেরাম সব সময় সেই আশঙ্কা বিবেচনায় রেখেছেন।
আজকাল সরকারগুলোর মধ্যে সম্পদের দুর্নীতি অত্যন্ত ব্যাপক। জাতীয় ভাণ্ডার অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হয়। জাতীয় সম্পদের বিরাট অংশ শাসকসমাজের আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার কাজে ব্যয় হয়ে যায়। অসংখ্য খরচ আছে এমন, যেগুলোর কোনো বৈধতা নেই। শাসকদের ভবন-প্রাসাদের খরচ লাগামহীন। বরং আফসোসের বিষয়! জাতীয় সম্পদের দ্বিধাহীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুসলিম দেশ অনেক অমুসলিম দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। যদি জাতীয় কোষাগারের খরচ থেকে এসব দুর্নীতি ও অপব্যবহার দূর করা হয়, তাহলে জনগণের ওপর ভারী ট্যাক্স আরোপের প্রয়োজন নিঃসন্দেহে বড় পর্যায়ে লাঘব হবে।কিন্তু এই সত্যও অস্বীকার করা যায় না যে নতুন সংস্কৃতি এমন অনেক খরচের খাত সৃষ্টি করেছে, যেগুলো বিলাসিতার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না; বরং এই যুগে যেকোনো দেশে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে হলে সেগুলো প্রয়োজন।বর্তমানের সরকারগুলোকে এমন অনেক সেবা দিতে হয়, যেগুলো আগেকার দিনের সরকারের জিম্মাদারি ছিল না। যেমন—দেশে বিদ্যুৎও গ্যাস সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন। অবশ্য অনেক বিভাগ আগেও ছিল; কিন্তু সেগুলোর খরচ এত বেশি ছিল না। বর্তমানে সেগুলোর খরচ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন,যুদ্ধের জন্য নতুন অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থা, পাকা সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগের নতুন মাধ্যম, তথ্য ও প্রচার ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এগুলোর প্রতিটির খরচ নিঃসন্দেহে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার এগুলোর মধ্য থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে (হানাফি মাজহাব মতে) জাকাত ও উশরের অর্থ ব্যবহৃত হতে পারে না।
পরিশেষে বলতে চাই, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের উক্ত নীতিমালা অনুসরণ করেই প্রত্যেক মুসলিমকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। কাজেই ব্যবসায়ে যুলম, ধোঁকাবাজি, জালিয়াতী, প্রতারণা, ঠকবাজী, মুনাফাখোরী কিংবা কোন নিষিদ্ধ জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন, বহন ইত্যাদি যা সামাজিক ও নীতি-নৈতিকতা বিরোধী তা অবশ্যই বর্জনীয়। সুতরাং ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ করেই ব্যবসা-বাণিজ্য করা শরী‘আতের দাবী।মহান আল্লাহ সবাইকে ইসলামের নির্দেশনাগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা দান করুন।আমিন।
পরিশেষে বলতে চাই, কম সময়ে ও সহজে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বড় অংকের অর্থের জোগানদাতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ। রাজস্বের ২৫ শতাংশের বেশি আদায় হয় কাস্টমস বা শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে।
অতীতে কাস্টমস ছিল এককভাবে রাজস্ব আহরণকারী খাত। বাণিজ্য উদারীকরণের স্বার্থে শুল্ক-কর কমলেও এখনো কাস্টমস সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত।
রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি কাস্টমস প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণের জীবনমান অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের শুল্ক আরোপ করে বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্যের আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করে। সেই বিবেচনায় কাস্টমস সাধারণ জনগণের কল্যাণেও কাজ করে যাচ্ছে।
যে কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমস বিভাগকে হতে হয় আধুনিক। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই আধুনিক কাস্টমসের যাত্রা। আর শুল্ক স্টেশনগুলো ব্যবহার করে কেউ যেন দেশের জন্য ক্ষতিকর কোন পণ্য আমদানী করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, বাংলাদেশ থেকে ভালো মানের পণ্য রপ্তানী নিশ্চিত করণেও রয়েছে কাস্টমসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
লেখক,কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
ইমেইল, drmazed96@gmail.com