প্রচন্ড শীতে কাঁপছে দেশ। কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশেই অনুভূত হচ্ছে শীতের তীব্রতা। শীতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘন কুয়াশা। এ কারণে দেশের অনেক অঞ্চলে দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। হিমশীতল ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই সময়ে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের তীব্রতা ছিল প্রচন্ড। তাপমাত্রার তুলনায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ উত্তরের হিমেল বাতাস। দেশজুড়ে এমন বাতাস বইতে পারে আরও কয়েক দিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি জানুয়ারিতে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শুরু হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। তবে তা তীব্র রূপ নেওয়ার আশঙ্কা কম। বর্তমানে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের অভিমত, দেশে এখন যে তাপমাত্রা রয়েছে, তা এ সময়ের জন্য স্বাভাবিক। তবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দেশের ওপর দিয়ে হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় এখন শীত তুলনামূলক বেশি অনুভূত হচ্ছে। এদিকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে কুয়াশায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া রুটে ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সেই সঙ্গে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথেও ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। গত ১৪ দিনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রায় ৮০ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল। আরিচা-কাজিরহাট রুটে ১০ দিনেই বন্ধ ছিল ৮৫ ঘণ্টা। যথাসময়ে যানবাহন নদী পাড়ি দিতে না পারায় দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। শীতে সবচেয়ে কষ্ট ভোগ করছে গরিব মানুষ। তাদের জীবিকায়ও শীত আঘাত হানছে। সাধারণভাবে বৃদ্ধ ও শিশুর অনেকেই শীতজনিত রোগের শিকার হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষায় বাড়তি নজর দেওয়া উচিত। শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে সমাজের সম্পন্ন মানুষ পাশে দাঁড়াবে, এমনটিও প্রত্যাশিত।
শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিমধ্যেই জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলও বিঘ্নিত হয়। এ জন্য বাস চলাচলে সতর্কবার্তা জারি করা উচিত। এ সময় শৈত্যপ্রবাহেরও আশঙ্কা থাকে।
শীতসহ যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষই বিপাকে পড়ে বেশি। তাদের পক্ষে একদিকে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা যেমন দুরূহ, অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও তাদের কম। ফলে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে তারাই আক্রান্ত হয় বেশি। শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার এখনই। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্রসহ কম্বল বিতরণের খবর অবশ্য আসছে গণমাধ্যমে। তবে তা যথেষ্ট নয়, এ ধরনের তৎপরতা আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত। বিত্তবানদের যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। আসুন আমরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।