বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন পৃথিবীর শতকরা একত্তর ভাগ জুড়ে রয়েছে পানি। পুরো পৃথিবীকে যদি আমরা চার ভাগ করি তাহলে পানির অংশ দাঁড়ায় চার ভাগের প্রায় তিনভাগ। পানি ব্যতিত জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
আর এজন্যই পানির অপর নাম জীবন।পানির মুখাপেক্ষী শুধু মানুষ নয়।প্রত্যেক প্রাণীর জন্যই পানি প্রয়োজন।কম কিংবা বেশি।পানি ছাড়া কোনো জীবই বেঁচে থাকতে পারে না।কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রেও পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া জলপথ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচলনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এ জন্য আমরা বলতে পারি মানব সভ্যতার বিকাশে পানির রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
পূর্বের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে নীলনদের তীরে,ইরাকের সভ্যতা দজলা ও ফোরাতের তীরে, ভারতীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে গঙ্গা ও যমুনার মিষ্টি পানির পাড়ে।পানিরও পরিবর্তন রয়েছে।সূর্যের উত্তাপে সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।আবার তা ভুমিতে ফিরে আসে।কখনো শিশির হয়ে আবার কখনো বরফ ও বৃষ্টিরূপে।
সমুদ্রের পানি লবণাক্ত।সূর্য যখন বাষ্প হয়ে উড়ে যায় তখন তার লবনাংশ সমুদ্রেই থেকে যায়। আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাই সাদা সাদা জমাট বাঁধা তুলো।আসলে তা তুলো না এগুলো জলীয় বাষ্প।
বিজ্ঞানীরা এ তথ্যও বের করেছেন যে,প্রতি ১কিলোগ্রামে পানিতে ৩৫ গ্রাম লবণ থাকে। পৃথীবির বুকে হাজার হাজার বছর ধরে পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু পানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে না।একটা নিয়মে পানির বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়া,মহাকাশে মেঘের আস্তর তৈরি হওয়া,বৃষ্টি বর্ষণ,এবং ভারসাম্যপূর্ণভাবে পানির অস্তিত্ব কি কাকতালীয় কোন ব্যাপার? আচ্ছা লাখ লাখ টন পানির অনু এমনিতেই বাতাসে ভেসে বেড়ায়?ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের সমন্বয়ে বৃষ্টির কণাগুলো কি এমনিতেই তৈরি হয়?এক মিটার মেঘ এক হাজার টন পানি নিয়ে উড়ে বেড়ায়ই বা কিভাবে?!
সামান্য বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে ভেবে দেখলে মাথা ঘুরে যায়।কী দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে তা বর্ষিত হতে থাকে!সর্বত্র সমানভাবে ঝরে।কোথাও কোনো ফোঁটা ছোট বা বড় হয়ে পড়ছে না।বৃষ্টি ঝরার এই চমৎকার ভারসম্যও কি কোন কাকতালীয় ব্যাপার?যে কোন বিবেকবান সিদ্ধান্ত দিবেন—এ সকল কিছুর পেছনে রয়েছে মহাশক্তিধর কোন মহান সত্তা।তিনিই হলেন বিশ্বদাতা ও বিশ্বভূমার অধিকারী ও অধিপতি মহান আল্লাহ তায়ালা।এ বিশাল জলরাশিকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন।
পবিত্র কুরআনে এ বক্তব্য খুবই যথার্থ — তোমরা কখনো চোখ খুলে দেখেছো,এই পানি তোমরা যা পান করো তা কি তোমরা মেঘ সমারোহ থেকে বর্ষণ করো?না এর বর্ষণকারী আমি?আমি ইচ্ছা করলে তা কঠিনতর করে রেখে দিতে পারি তবু কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো না?(ওয়াকিয়া:৬৯-৭০)
আরো ইরশাদ হয়েছে’আর তুমি জমিনকে দেখবে শুস্ক। তারপর আমি যখন তাতে বারি বর্ষণ করি তখন তা শস্যশ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।
মহান আল্লাহ আরো বলেন ‘তারা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি প্রেরণ করেন এবং তার করুণা বিস্তার করেন।তিনিই তো প্রশংসার্হ অভিভাবক'(শুরা:২৮)
একটু চিন্তা করলেই ভোরের আলোর মতো উদ্ভাসিত হয়—পানির প্রতিটি বিন্দু মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে।কষ্টের ব্যাপার হলো এ নিয়ে আমরা কিঞ্চিতও ভাবি না।অকৃজ্ঞের মতো নেয়ামত ভোগ করি।
প্রিয় পাঠক!আসুন আমরা আমাদের প্রতিপালকের অসীম কুদরত অনন্ত নিয়ামতের কথা ভাবি এবং তাঁরই আনুগত্যে সমর্পিত হই।সকল প্রশংসা তাঁরই।তাই আসুন হৃদয়ের গভীর থেকে বলি—আলহামদুলিল্লাহ!
লেখক: শিক্ষার্থী মাদরাসা উমর রা.আল ইসলামিয়া, ঢাকা।