আগাম আলু উৎপাদনের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলার কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস আলু চাষাবাদ। এখন আগাম আলু উৎপাদনের জন্য বীজ রোপনের সময়। তাই মাঠ প্রস্তুতে ব্যস্ত কৃষকরা। কিন্তু যেখানে অন্যান্য বছর কৃষকরা উৎসবমুখর পরিবেশে বীজ রোপন করেছিল, সেখানে এবার কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। চলতি বছর সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ২৭ টাকা। সরেজমিনে হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামের কোন তোয়াক্কা করছেননা আলু ব্যবসায়ীরা। ৪০-৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বীজ আলু। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে বীজ আলুর সংকট। দিনের বেলায় বিক্রি বন্ধ রাখছেন পাইকারি বিক্রেতারা। কৃষকরা বলছেন, এটি ব্যবসায়ীদের অধিক দামে বিক্রির জন্য নতুন কৌশল। এরইমধ্যে অনেক কৃষক জমিতে গোবর সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করেছেন। তাই তাদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে বীজ আলু ক্রয় করতে হচ্ছে। পুটিমারী ইউনিয়নের আলু চাষী হারুন মিয়া বলেন, ‘আমি গত বছর ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। এতে ৫০ কেজি ওজনের ২৭০ বস্তা আলু উৎপাদন হয়েছিল। অভাবের তাড়নায় জমিতেই ১১ টাকা কেজি দরে সব আলু বিক্রি করে ফেলেছি। এই বছর আমি আগাম আলু চাষ করার জন্য ৪ বিঘা জমি প্রস্তুত করেছি। এজন্য আমার প্রয়োজন ১২০০ কেজি বীজ প্রয়োজন। তিনদিন ধরে হিমাগারে ঘুরে বাধ্য হয়ে প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকা দামে কিনতে হয়েছে।’ উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলু চাষী মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রায় সারে তিন বিঘা জমি আগাম আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। দুই সপ্তাহ আগে ৩৬ টাকা কেজিতে ২০ বস্তা বীজ আলু কিনেছি।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আলু বীজের কোন সংকট নেই। এ উপজেলায় একটি হিমাগারে রয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টন আলু রয়েছে। এছাড়া জলঢাকা উপজেলার দুটি হিমাগার, নীলফামারী সদর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা ও রংপুর সদরের হিমাগারগুলোতে কিশোরগঞ্জের কৃষকরা বীজ আলু রেখে থাকেন। বর্তমানে কিশোরগঞ্জে বীজ আলু চাহিদা ৬ হাজার ৯০০ টন, যা কিশোরগঞ্জের মুক্তা হিমাগারেই মজুদ রয়েছে। যা দিয়েই কিশোরগঞ্জের আলুর চাহিদা পূরণ সম্ভব। বাকি হিমাগারগুলোতে যে আলু রয়েছে চাহিদার তুলনায় সেটি তিনগুণ।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, হিমাগারে যে আলু রয়েছে তার বেশির ভাগ আলু ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি আলু ১১-১২ টাকা কেজি দামে ক্রয় করেছে। সকল খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম পরে ১৮-২০ টাকা। তারা ইচ্ছে করলেই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আরো এক দুই টাকা কমে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু গত বছর আলুর দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তাই এবার তারা সিন্ডিকেট করে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু কেনাবেচার জন্য হিমাগারগুলোতে প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি হাটবাজারগুলোতেও নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশি দামে আলু বিক্রির দায়ে একজনকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও যারা বেশি দামে আলু বিক্রি করছে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।’ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গত বছর ৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। ফলনও ভাল হয়েছিল। উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টন আলু। এবার ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি।