২০১০ সালে ১০০ শয্যার হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যা করার ঘোষণা দেয়ার এক যুগ পরও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি সরকারি প্রক্রিয়ার কারনে আটকে আছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বাজেট।কাগজে কলমে ২৫০ শয্যা থাকলেও এখন বরাদ্দ আসে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের। আসলে ১০০ শয্যার হাসপাতালে যে চিকিৎসক জনবল থাকার কথা, বরগুনাবাসী সেটিও পাচ্ছে না। যে চিকিৎসক থাকার কথা, আছে তার এক-চতুর্থাংশ। ফলে বোঝাই যায় কতটা ভঙ্গুর প্রায় ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার চিকিৎসালয়টি আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যা করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফেরার পরের বছর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
২০১৩ সালে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে সাততলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০১৮ সালে নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবলের কারণে পরিপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। এর তিন বছর পর ২০২১ সালের জুন মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, আড়াই’শ শয্যার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৫১ জনের কাজ করার কথা। কিন্তু সেখানে ১০০ শয্যার প্রয়োজনীয় লোকবলই নেই। সেবা নিতে আসা আঃ রহমান নবচেতনাকে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গাইনি ডাক্তার দেখাতে বরগুনা সদর হসপিটাল এ আসি। আমার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় আমি একটু তাড়াতাড়ি আসি যেন দ্রুত ডাক্তার দেখাইয়া বাড়ি যাইতে পারি, কিন্তু ডাক্তারের এখানে অনেক সিরিয়াল লম্বা হওয়ার কারণে অনেক দেরি হয়। ডাক্তার সাহেব ও তার সরকারী ব্যবহার ভাল না,অন্য রোগীর সাথেও আমি খারাপ ব্যবহার করতে দেখেছি তারপরও ডাক্তার দেখাইতে পারিনি পরে বে-সরকারি ন্যাশনাল হসপিটালে গিয়ে দেখাইছি ।তিনি আরও বলেন হাসপাতাল যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকে তাহলে সুস্থ রোগীও অসুস্থ হয়ে যায়, আমরা যারা গরীব মানুষ ডাক্তার দেখাইতে আসি তাদের একটু দাবি হাসপাতালটি যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে। সরেজমিনে গিয়েও হাসপাতালে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা যায়। আরও একজন সেবা নিতে আসা তসলিমা বেগম নবচেতনাক বলেন,মুই গরিব মানু দিন আনি দিন খাই ওষুধ কেনার টাহা থাকে না। আইছি হাসপাতালে ডাক্তার দেহাইতে ওষুধ নিমু কিন্তু হেরা কয় প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও নাই, অনেক সময় ঔষধ থাকে অনেক সময় থাকে না। সহিদুল ইসলাম স্বপ্ন -( সমাজ সেবক,গণমাধ্যম কর্মী) নবচেতনাকে বলেন,বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা তিন-চতুর্থাংশ জনবল নেই। এটা নিয়েও আমরা আন্দোলন করেছি। স্বাস্থ্য বিভাগের অবহেলার কারণে শূন্যপদগুলো আজ পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। ৩০ মাসের কাজ ৯ বছরেও শেষ হয়নি এখনো, চলমান আছে আড়াই শ শয্যার হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজ । তিবি আরও বলেন‘২০১৮ সালে ভবন উদ্বোধনের পরও ছয় বছর শেষ। কিন্তু চিকিৎসাসেবা পরিপূর্ণভাবে শুরু করা যায়নি। স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সেবা খাতে যদি এমন অবস্থা থাকে তবে আমরা দুর্ভাগা ছাড়া কিছুই নই। এই জটিলতা নিরসন করে দ্রুত হাসপাতালটি পরিপূর্ণভাবে চালু করা এখন সময়ের দাবি।’ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: এ. কে. এম. নজমূল আহসান তথ্য মতে, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৫৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে তিনি একজন। বাকিদের মধ্যে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), ছয়জন চিকিৎসক, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি ও অর্থোপেডিকস বিভাগ আছেন একজন করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং একজন হোমিও চিকিৎসক, একজন চক্ষু চিকিৎসক।এখনো ৩৮ টি পদ শূন্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি নামে ২৫০শয্যা বিশিষ্ট কিন্তু বাজেট আসে এখনো ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতালের। বরগুনা জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম এক প্রকার চালিয়ে নিচ্ছি। লোকবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ না হওয়ায় আমরা নতুন ভবনে পরিপূর্ণ ভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি না।’ তিনি আরও যানান, ‘নিয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জটিলতা চলছে। দুই সংস্থাই নিয়োগ দিতে চায়। এ কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই হাসপাতালটি আমরা পরিপূর্ণভাবে হাসপাতালের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছি না।’ যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন,প্রশাসনিক অনুমোদন হয় মন্ত্রণালয় থেকে, প্রস্তাবটা আসে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে যিনি তত্ত্বাবধায়ক থাকেন তার মাধ্যমে ।স্থানীয় তত্ত্বাবধায়কের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের একটি চাহিদা পত্র মন্ত্রণালয়ের দিতে হয় তার কত জনবল এবং বাজেট প্রয়োজন । যদি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও থাকে অদৃশ্য কারনে মন্ত্রণালয় আটকে আছে ফাইল এটা তদারকি করতে হবে,শুধু চিঠি দিলেই হবে না নিজ উদ্যোগ নিয়ে অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে । যদি স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক এর কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় এ কাজের জন্য এবং কোথায় ফাইল আটকে আছে, কি করলে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হবে এর সকল দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা আমাদের কাছে চাইলে আমরা করব।