সাবেক এমপি সিরাজ মোল্লা টাকা, পেশি শক্তি আর প্রভাবে নরসিংদী শিবপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাতারাতি অলিখিত সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন। খরকোটা আর ডলার ব্যবসার আড়ালে রাজনীতিকেই টাকা কামানোর হাতিয়ার বানিয়ে গড়ে তোলেছিলেন সাম্রাজ্য। শিবপুর বাজনাব এলাকার মৃত ফয়জুদ্দিন মোল্লা বাজনাব বাজারে বোতলে সামান্য তৈল বিক্রী করতেন। আর তার চার ছেলে সিরাজ মোল্লা,নুরুল ইসলাম মোল্লা,তাজুল মোল্লা,রফিকুল ইসলাম মোল্লা এলাকা থেকে বাঁশঝাড় ক্রয় করে ও খরকোটাসহ বাজারে বিক্রি করতেন বলে জানান এলাকাবাসী।
আর চার সন্তানের ভরনপোষন করতে হিমসিম খেতে হয় বৃদ্ধ ফয়জুদ্দিনের। যার ফলে সিরাজ মোল্লা নরসিংদী সরকারী কলেজে এইচ এসসি অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায় অন্যের বাড়ীতে লজিং থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলেও জানান এলাকাবাসী। তিনি ডলার সিরাজ মোল্লা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ১০ বছর পূর্বে শিবপুর থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে সম্পদের পাহাড়। শুরু হয় বৈধ অবৈধ পথে শেয়ারবাজার, ডলার আর ম্যান পাওয়ারের ব্যবসা। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী সালমান এফ রহমানের সাথে মিলে শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নরসিংদী শহরে আকাশ চুম্বি যতগুলো বিল্ডিং রয়েছে সবই সিরাজ মোল্লার। নরসিংদী বাজির মোড়,উপজেলা মোড় ও চিনিশপুর এলাকায় সবচেয়ে বড় ১৮ তলা বিল্ডিং তার। এছাড়া নরসিংদী পাঁচদোনা চায়না বাংলা সিরামিক্স,কাঁচপুর চায়না বাংলা সিরামিক্স,ঘোড়াশালে পুবালি জুট মিল লি:,ইটাখোলা সিএনজি পাম্প, বাজনাব নিজ এলাকায় রাজকীয় বাড়ী,শিবপুরে নিজস্ব অফিসসহ অসংখ্য জায়গা জমি,বাঘাব ও কামাটেক এলাকায় শত শত একর জমি, চরসিন্দুর এলাকায় শত শত একর জমি,ঢাকাতে অসংখ্য বিলাস বহুল বাড়ী ও জমি। প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক,নেত্র কোনায় বিডিসিরি এলাকায় চুনাপাথর যতদুর চোখ যায় শুধু সিরাজ মোল্লার জমি বলে জানায় এলাকাবাসী। আর বর্তমানে চার ভাই প্রত্যেকেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায়। আর এসব ব্যবসা দেখাশুনা করেন পিএস কালাম, তিনিও বর্তমানে কোটি পতি। আর এসব দেখাশুনা করতে সিরাজ মোল্লা নিজ এলাকাসহ নরসিংদতে গড়ে তুলেছেন লাঠিয়াল বাহিনী যার কারনে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছক এলাকাবাসী জানায়, তাঁর তৈরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভূমি দখল,শেয়ার বাজার লুট,হোন্ডি ব্যবসা,ম্যানপাওয়ার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণকাজের নিয়ন্তনও ছিল তার হাতে। সাবেক এমপি সিরাজ মোল্লার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জেলায় সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুলালপুরে বালু ব্যবসা ছিল তাঁর দখলে। পরিবারের সদস্যরা তাঁর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শিবপুরসহ পুরো জেলায় গড়ে তোলেন সাম্রাজ্য। যার ধাপে ধাপে ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্য। ক্ষমতার দাপটে সেই সিরাজ মোল্লা স্ত্রী ফেরদুসীকে বানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। শুধু দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদের পাহাড়ই গড়েননি সাবেক এমপি সিরাজ মোল্লা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলনে ছাত্রদের উপর হামলার নির্দেশ দাতা হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সকালে মামলা বিকালে প্রত্যাহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সাবেক সিরাজ মোল্লা ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ডাকা দিয়েছেন। নরসিংদীতে অপরাধ সংঘটনেও সমান সিদ্ধন্তে ছিলেন তিনি। কয়েক বছরে সাবেক এমপি সিরাজ মোল্লা ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক হাজর গুন। এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কয়েক বছর ঘাটাঘাটি করেও এক টেবিল থেকে আরএক টেবিল এর পর আর কোন প্রদক্ষেপ দেখা যায়নি। এখন শৈরাচার সরকার পতন হওয়ায় এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। এলাকাবাসী জানায় অজপাড়া গায়ের সামান্য বাঁশ আর খরকোটার ব্যবসায়ী থেকে অঢেল সম্পদের মালিক প্রভাবশালী সাবেক এমপি সিরাজ মোল্লা।