ভিক্ষা করে জমানো প্রতিবন্ধী ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করা, তাকে মারধর করা এবং নেশার বড়ির ভাগ না পাওয়ায় রাগে ক্ষোভে কাচের ভাঙা বোতল দিয়ে আঘাত করে ছোট ভাই টোকাই আবু বকরকে হত্যার ঘটনায় সৎভাই প্রতিবন্ধী আব্দুল হালিমকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটায় বাঘের বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জয়দেবপুর থানায় সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটনের তথ্য নিশ্চিত করেন। হত্যার শিকার আবু বকর ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার গরজা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। সে তার সৎভাই প্রতিবন্ধী (এক পা পঙ্গু) আব্দুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে বাঘের বাজার ফুটওভার ব্রিজে রাতযাপন করতো। হালিম ভিক্ষা করতো এবং আবু বকর নেশা করতো। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল হালিম তার ভাইকে কাচের ভাঙা বোতল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, আব্দুল হালিম ও আবু বকর সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরের বাঘের বাজার আসে। ওই দিন রাত ৮টায় হালিম বাঘের বাজার ফুটওভার ব্রিজের ওপর ভিক্ষা করছিল। এ সময় ছোট ভাই আবু বকর নেশা করার জন্য তার কাছ থেকে ১০০ টাকা নেয়। মধ্যরাত হয়ে গেলেও আবু বকর ফিরে না আসায় হালিম ৩টার দিকে তাকে খুঁজতে বের হয়। পরে স্থানীয় মণ্ডল ইন্টিমেন্টস লিমিটেড পোশাক কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ডিভাইডারের ওপর আবু বকরকে নেশা সেবন করতে দেখে তার কাছে যায়। এসময় ছোট ভাই আবু বকর প্রতিবন্ধী ভাই হালিমের কাছে নেশা করার জন্য আরো টাকা চায়। এ সময় বড় ভাই হালিম ছোট ভাইয়ের কাছে নেশাজাতীয় ঘুমের ২০টি বড়ি চাইলে দেবে না বলে জানায়। উল্টো ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কাছে নেশা কেনার জন্য আরও টাকা চায়। টাকা না দিলে ছোট ভাই আবু বকর বড় ভাই হালিমকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারে। এর কিছুক্ষণ পর আবু বকর নেশার বড়ি খেয়ে অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। হালিম পাশ থেকে কাচের বোতল নিয়ে সড়ক বিভাজকের লোহার রেলিংয়ে ভেঙে বোতল দিয়ে আবু বকরের বুকের দুই পাশের পাঁজরে উপর্যুপরি আঘাত করে তার ভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। পরে সে ফুটওভার ব্রিজের ওপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ৬টার দিকে হালিম ঘুম থেকে উঠে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ছোট ভাই আবু বকর মারা গেছে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা লাশ উদ্ধার করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম, পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম এবং তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুর রহমান।