শান্ত মালো, নিটার প্রতিনিধি
মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর। সারা বছরের কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু আনন্দের আমেজ সৃষ্টি করে এই পবিত্র ঈদ। সবাই তাদের পরিবারের সঙ্গে তৃপ্তির সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পায়। ঈদের এই ছুটিতে পরিবারের সাথে কেমন সময় কাটছে নিটারের শিক্ষার্থীদের। নিটারের শিক্ষার্থীরা ঈদের আমেজ কেমন উপভোগ করছেন তা তুলে ধরেছেন নিটার প্রতিনিধি শান্ত মালো।
“আমার মা’য়ের হাতের গরুর মাংস আর ঝোল এবং চিতই পিঠা ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়”
সালামি আদান প্রদানের রমরমা উদ্দীপনায় এবং ক্ষুদে বার্তায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় মধ্যরাতেই শেষ । ঈদ সকালে নতুন করে শুরু। ঘুম থেকে উঠেই দেখি তাহসিন আব্বু কে বলে উঠলো- সালামি দেন । তাহসিন,মীম,প্রাইম, আরিফা তাদের সালামি পর্ব বেশ তড়িঘড়ি এবং হাস্যজ্বল মুখে সেরে ফেললো । অন্যদিকে মা’য়ের সেমাই রান্না শেষ । ঈদগাহ থেকে ভেসে আসা -‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ ধ্বনিতে ঈদের নামাজের সুবাস বহন করছিল । মিষ্টি মুখে নামাজ পড়ে কুলাকুলিতে ঈদ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করলাম এবং বাড়িতে এসে ছবি তুলতে কেউ ভুল করেনি।
বাড়ির উঠোনে দাড়াতেই খাবারের ঘ্রানই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল “ঈদ মানে খুশি,ঈদ মানে আনন্দ” । আমার মা’য়ের হাতের গরুর মাংস আর ঝোল এবং চিতই পিঠা । আহ! মনোমুগ্ধকর আর সুস্বাদু সব খাবার এবং আব্বু-আম্মু, দাদা -দাদি,চাচা -চাচি, ভাই-বোন সবাই এক সাথে। এর চেয়ে আর আনন্দের কি হতে পারে!
প্রচন্ড রোদে বাইরে কোথাও যাওয়া যেন আগ্নেগিরি পার করার মতন কঠিন কাজ হয়ে গেছিল । তাই মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে চোখের পাতা বন্ধ করতেই দেখি প্রায় সন্ধ্যে । বাজারে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা সবাই ডাকাডাকি করতেছে । বন্ধুদের সাথে আড্ডা পরবর্তীতে সবাই মিলে দীঘল বানা গ্ৰামে গিয়ে দেখি দড়া টানা খেলা হচ্ছে । ঈদের দিনে এই দড়া টানা খেলা বেশ তৃপ্তি দিয়েছে। ঈদ পরবর্তী দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বনভোজন এবং ভ্রমন আমাকে ঈদের আনন্দ জুগিয়েছে। মনে করিয়ে দিয়েছে,”ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ”।
মোঃ ফয়সাল শেখ
তৃতীয় বর্ষ, ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
“ক্যাম্পাসের কাছাকাছি থেকে ঈদ উদযাপন স্মৃতির পাতায় আরেকটি সুন্দর অধ্যায় রচনা করলো”
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শুক্রবার নীলক্ষার আকাশে উকিঁ দিলো পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ! ‘চাঁনরাইত’ বলে আমাদের অঞ্চলে।কেউ যদি ‘ঈদ কেমন কাটলো’ , তা জানতে চাই, তখন চোখে মুখে ভেসে উঠে সেই ছোটবেলার কথা।
ছোটো বেলার চাঁদরাত নিয়ে কত মধুর স্মৃতি। আহা!
সমবয়েসী সব ভাই-বোনদের সাথে নানু বাড়িতে কখনো দাদু বাড়িতে ইফতার করেই নামাজ না পড়েই দাঁড়িয়ে থাকতাম চাঁদ দেখার জন্য ।আমাদের মধ্যে কেউ একজন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতো ওইতো চাঁদ। সবাই তখন ওই চাঁদের দিকে আঙুল তুলে উচ্ছ্বসিত হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে সমস্বরে চিৎকার করে উঠতাম ‘চাঁদ উঠেছে চাঁদ উঠেছে’। আর ঈদের দিন দল বেঁধে নতুন পাঞ্জাবী পড়ে হুল্লোড় করতে করতে ঈদের সালাত আদায় করতাম। তারপর বয়োজ্যেষ্ঠদের পা ছুঁয়ে সালাম করে লুফে নিতাম সালামী।সারাদিন জুড়ে ঘোরাঘুরি, এনার বাসায়- ওনার বাসায় বেড়াতে যাওয়া, প্রিয়জনদের হাস্যজ্জল আন্তরিক আপ্যায়ন, পেট ভরে খাওয়া দাওয়া রাতের বেলায় ক্লান্ত শরীরে ফিরে এসে বিটিভির ঘুম ঘুম চোখে অনুষ্ঠান উপভোগ, তারপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে ঘুমে তলিয়ে যেতাম। মায়ের বকুনি ছিলো নাহ, পড়াশোনার বালাই ছিলো নাহ।
দিন দিন বয়েস বাড়ছে আর সেই প্রাণ চঞ্চল্য ঈদের আমেজ হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো সেই ঈদের আনন্দ এখন আর কেনো জানি কর্পোরেট গন্ডির সীমা পেরিয়ে উপভোগ্যকর হয়ে উঠে না।
তারপরেও এইবারের ঈদ অনেকটা ব্যতিক্রম। হল থেকে বাসায় ফিরেছি দেরিতে। জরুরী সেবায় চাকুরী করায় বাবার ছুটি দুই ঈদে হয়ে উঠে না। এই ঈদে ছুটি পেলো তো, ওই ঈদে পেলো না। এইবার ও তাই হলো। তাই মা, বাবার সাথে ওনার কর্মস্থলে একসাথে ঈদ করলেও তিন ভাই-বোন মিলে ঈদ করেছি প্রথমবারের মতো সাভারেই। চাঁদরাতে ঈদের বাজার করে সবকিছু সামলে নিয়ে নিশাচর আমি ঘুমাতে গিয়ে দেখি অনেক দেরি হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম একবারে ফজর পড়ে ঈদের নামাজ পড়েই ঘুমাবো। সকালে আপুর হাতের সেমাই খেয়ে টলতে টলতে ঈদের নামাজ পড়তে গেলাম। এসেই বিরতিহীন এক লম্বা টানা ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই তিন ভাই বোন আর ভাগ্নে মিলে খাওয়া দাওয়া শেষে তৈরি হয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পালা। প্রিয়জনের দেওয়া কাবলি পড়ে সিড়ির কুড়ি ধাপ পেরিয়ে ছাদে গিয়ে তিন ভাই-বোন মিলে বেশ কিছু ছবি তুললাম। তারপর রিক্সায় চড়ে চলে গেলাম চিরচেনা কাকরান ব্রিজ। খাওয়াদাওয়া শেষে অনেকটা ভালো সময় কাটানোর পর ভাগ্নেকে কোলে নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।
হয়তোবা খুব সাদামাটা ঈদ মনে হতে পারে কারো কারো কাছে;কিন্তু ভাই-বোনের খুনসুঁটি, ভাগ্নের আনন্দ আর ঈদে বাড়ি না গিয়ে ক্যাম্পাসের কাছাকাছি থেকে ঈদ উদযাপন স্মৃতির পাতায় আরেকটি সুন্দর অধ্যায় রচনা করলো।
জাওয়াদ আবরার
৩য় বর্ষ,ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
“ঈদ মানেই পরিবারের সাথে থাকা”
আমার কাছে ঈদ মানেই পরিবারের সবাই একসাথে মিলে আনন্দ করা। সবার সাথে দেখা করা। ছোটবেলা থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কবে ঈদ আসবে আর পরিবারের সবাই মিলে বাড়ির সামনের উঠোনে বসে আড্ডা দেবো। ঈদ আমার জীবনে সব সময়ই রঙিন হয়ে এসেছে। পরিবারের যে যেখানেই থাকুক না কেনো ঈদের আগে সবাই খুব আয়োজন করে বাড়ি ফেরে। সবার সাথে অনেকদিন পর দেখা হাওয়া এক অন্য রকম অনুভুতি। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। চাঁদ রাতে মা চাচী বোনেরা সবাই একসাথে বসে মেহেদী দেয়া আর সারারাত বসে গল্প করা। মার রান্না করা পায়েশ, সেমাই, জর্দা পুলাও আর চাচীর করা পিঠা দিয়ে দিনের শুরু। বাবা চাচা নামাজ পড়ে আসলেই সবাই এক লাইন করে সালাম করা। সালামী তুলা, কে কার থেকে বেশী সালামী পেলো তা হিসাব করে দেখা। বিকেলে সবাই একসাথে ঘুরতে বের হওয়া। সব মিলিয়ে আমার জীবনে ঈদ হইহুল্লোড় করেই কেটে যায়। সকলের উচিত ঈদের আনন্দ উপভোগ করা। জীবনের প্রতিটি ঈদ রাঙিয়ে তুলা।
নাজিফা আঞ্জুম তুর্ণা
১ম বর্ষ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
“ইট-পাথরের শহরে ঈদ”
বরাবরের মতো এবারের ঈদও বাবা
-মা , বোনদের সাথেই । বাবার সরকারি কোনো এক কাজের জন্য এবার গ্রামে যাওয়া হয় নি তাই ঈদ ঢাকাতেই কেটেছে । অবশ্য ঢাকার ঈদ গ্রাম থেকে আলাদাই বললে চলে । ভেবেছি গ্রামে গেলে হয়ত ভালো ঈদ কাটবে কিন্তু তবুও হতাশ হই নি । গত কয়েকবছরের তুলনায় এবারের ঈদ অনেক ভালো কেটেছে । তবে আগের মত চাঁদ রাত উৎযাপন করা না গেলেও ছোট বোনদের নিয়ে চাঁদ দেখা আর তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করা বেশ ভালোই লেগেছে। খুব সুন্দর এক শীতল আবহাওয়া বিরাজ করেছিল ঈদ এর সকালটায় । ঈদের শুভেচ্ছা আর বাবা মার থেকে সালামি নিয়েই আমার দিন শুরু হয় । মেঘাচ্ছন্ন খোলা আকাশের নিচে বাবার সাথে ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছি । বাবা আর এলাকার পরিচিতি পরিজন ,বন্ধুদের সাথে কুশল বিনিময় তারপর সালামির আবদার করতে করতেই আকাশ ভেঙে তীব্র বর্ষণ শুরু হয়ে গেল । দৌড়ে বাসায় এসে আমি আর বাবা খাবার খেয়ে মা আর বোন দের সাথে গল্প জুড়ে নিলাম বাইরে খুব বৃষ্টি পড়ছিল তখন । বিকেল হওয়ার ঠিক আগ দিয়ে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল , আকাশের এক কিনারা দিয়ে সূর্যের কোমল আলো চারদিক সোনালী রঙে ভরিয়ে দিল । পরিবারের সবাই তখন বাইরে ঘুরতে বের হয়ে গেলাম । বাসায় ফিরে এসে আবার আমি বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে বের হলাম । ওদের ছাড়া ঈদ আসলেই অপূর্ণ লাগে । সব মিলিয়ে আমার ঈদ ভালো কাটানোর প্রত্যাশা সফল হয়েছে । ঈদ মানেই খুশি আর এই খুশিই প্রতি বছর আমরা আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভাগাভাগি করে থাকি আর প্রত্যেক বছর যেন এভাবেই ঈদ কাটাতে পারি এই প্রত্যাশা করি ।
অনিকুজ্জামান তপু
১ম বর্ষ, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট