শনিবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শেরে বাংলা হলে মারামারির ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে হলের কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ সময় ৩০০৩ নম্বর কক্ষ থেকে দুটি দেশীয় অস্ত্র (বগি দা) উদ্ধার করা হয়।
হলের একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতা মহিউদ্দীন সিফাতের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুম্মন হোসেন ওই কক্ষে থাকেন। কক্ষটি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কক্ষ হিসেবে পরিচিত।
হলের ২০০৬ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালাতে গেলে সেটি বন্ধ পান প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকেরা। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে কক্ষটি খুলে তল্লাশি চালানো হয়। ওই কক্ষটিতে তাহমিদ জামান ওরফে নাভিদ থাকেন। তাহমিদও মহিউদ্দীন সিফাতের অনুসারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তাহমিদ জামান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে বেশ বেপরোয়া। এর জেরে প্রতিপক্ষ আলীম সালেহীর তিন অনুসারীকে গত শনিবার ওই কক্ষে আটকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করেন তাহমিদ ও তাঁর অনুসারীরা।
দুটি দেশি অস্ত্র উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করে হলটির প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘গত শনিবারের ঘটনার পর হলের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা কয়েকটি সন্দেহভাজন কক্ষে তল্লাশি চালাই। এ সময় ৩০০৩ নম্বর কক্ষ থেকে দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই কক্ষটিতে ছাত্রলীগের রুম্মন হোসেনসহ আরও সাতজন থাকেন। অস্ত্র উদ্ধারের পর কক্ষটি তালাবদ্ধ করে দিয়েছি। তবে ওই সময় রুম্মন কক্ষে ছিলেন না। এ ছাড়া ২০০৬ নম্বর কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে খুলে দুবার তল্লাশি করেও কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি।’
শনিবার রাতে শেরে বাংলা হলের তিন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। রাত দুইটা থেকে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রাজু মোল্লা, একই বিভাগের হাবিবুল্লাহ মিলন এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিফাত হাসান । আহতরা শেরে বাংলা হলের ২০০৭ ও ২০০৯ নং রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়া তারা তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রাত ২ টায় হলের ২০০৬ নং কক্ষে ও পরে টিভি রুমে মারধরের ঘটনা ঘটে। রাত পনে তিনটার দিকে কতিপয় শিক্ষার্থীরা ঐ তিন শিক্ষার্থীকে মাঠে নিয়ে তর্কাতর্কিও ও মারধর করে ৷ একপর্যায়ে তিনটার দিকে শেরে বাংলা হলের প্রোভোষ্ট আবু জাফর মিয়া আহত অবস্থায় রাজু মোল্লা, মিলন ও সিফাতকে উদ্বার করে হল প্রভোস্টের রুমের সামনে নিয়ে আসেন।
পরবর্তীতে ভোররাতে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া আহতদের এম্বুলেন্সে করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আহত এক শিক্ষার্থীর (রাজু মোল্লার) মাথা ফেটে গেছে। বাকি দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে আহত রাজু মোল্লা বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার বিরোধী পক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাতের অনুসারী তাহমিদ জামান নাভিদ, শরীফুল ইসলাম সহ পাঁচ থেকে সাতজন বিনা কারণে আমার ওপর হামলা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম আজ বিকালে প্রতিবেদককে বলেন, হলটিতে গত শনিবার রাতের ঘটনার প্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শেই হল কর্তৃপক্ষ গতকাল রাতে রুম রুমে তল্লাসি চালান। রুমে যদি এমন দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায় তাহলে প্রাথমিকভাবে তাদেরকে সতর্ক করা হবে। এর পরেও তারা সতর্ক না হল কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসান বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হলে বৈধ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ সুশৃঙ্খল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’