৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম আমাদের এই বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটিতে ঘটে চলেছে কিছু আজব ঘটনা যা প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে প্রকম্পিত করে তুলেছে।
এদেশে ফকিরেরা দান করেন আর প্রভাবশালী নেতা ও আমলারা দান ও ত্রানের সামগ্রী ভোগ করেন। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এজন্যই হয়ত আফসোস করে বলেছিলেন, সকলে পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। সেই ৭১ সালের ত্রান ও কম্বল চোরের উত্তরসূরীরা ২০ সালেও পুরোনো কাজে সক্রিয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশের জনগনের চরিত্রের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। আদৌ হবেও বলে বিশ্বাস হয় না।
ইতিহাস বলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতাকে বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেন সেদেশের সামরিক বাহিনী ও জনগন আর এদেশের জনগনকে রক্ষা করতে জীবন দিতে হয়েছে স্বয়ং জাতীর পিতাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবেকের তাড়নায় দলীয় কর্মিদের নির্দেশ দিয়েছেন এই ভয়াবহ মহামারিতে অসহায় কৃষকের ফসল কেটে বাড়িতে তুলে দিতে কিন্তু কর্মিরা ব্যাস্ত কৃষকের কাঁচা ধান কেটে সংবাদের শিরোনাম হতে ও সেলফি তুলতে। অসহয় কৃষক বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু আফসোস করছেন। সামনের উপর এমন ক্ষতি কি মেনে নেওয়া যায়? কিন্তু মুখ খুললেই বিপদ কারন নেতা বলে কথা। ধান কাটছেন ৫ জনে কিন্তু জমিতে লোক ৫০ জন এবং ক্যামেরা ২০টি। কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল জমিতেই মাড়াই হয়ে যাচ্ছে, এটাই বাস্তবতা।
এদিকে মন্ত্রীসভার কিছুসংখ্যক সন্মানীত সদস্যকে নিয়ে সম্ভবত মহা বিপদে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এদের দশা সামছুর মত। পরে কোন একদিন এটা নিয়ে না হয় কথা বলবো। আজ পুরনো দিনের কিছু কথা বলি। কৃষকের অসুস্থ হালের বলদের শরিরের পোকা ঝরাতে তখনকার দিনে ৭ জন সুদখোর বা ঘুষখোরের নাম যোগার করতে কবিরাজ মহাশয়কে অনেক বেগ পেতে হতো। আর এখন চোখ বন্ধ করে সাত জন নেতা বা সরকারী কর্মকর্তার নাম লিখে বলদের গলায় ঝুলিয়ে দিলেই নিশ্চিত কাজ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাঙালীর চরিত্রের এটাই উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
আশি’র দশকের কথা বলছি। আমি ৮ম শ্রেনীর বৃত্তি পরিক্ষা শেষে ঢাকায় বেড়াতে এসেছি। ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার থেকে গুলিস্থান যাব বলে লোকাল বাসে উঠেছি। বাসের মধ্যে অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি একটা আসন পেয়েছি। বাসটি সাইন্সল্যাবরোটরী যেতেই কয়েকটা ছিট ফাকা হলো আর শুরু হলো সিটে বসার প্রতিযোগিতা। দেখলাম ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে টোপকিয়ে ২০/২২ বছরের এক যুবক সিটে বসতে মরিয়া। বৃদ্ধ লোকটি যুবকের নিশানা বুঝতে পেরে সিটটা এমনভাবে আলগে রেখেছেন যে, যুবক নিশ্চিত ঐ সিটে সে বসতে পারবে না। এমতাবস্থায় বৃদ্ধ যুবকে বললেন বাবা তোমার বোধ হয় খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি এখানে বস। বলতেই যুবক সিটে বসলো। এবার বৃদ্ধ লোকটি যুবককে জিজ্ঞেস করলো বাবা তুমি কি কর? যুবক উত্তর দিলো আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বৃদ্ধ লোকটি বিস্মিত হয়ে বললো, আমি বিশ্বাস করি না। যুবক বললো কেন অবিশ্বাস করছেন? উত্তরে বৃদ্ধ বললেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হতে পারে এটা বিশ্বাস কারা তো দুরের কথা আমি ভাবতেও পারি না। কিছুক্ষণ না যেতেই বৃদ্ধ লোকটি যুবককে বললেন বাবা তোমার কথা সত্যি হলেও হতে পারে। আসলে তোমরা তো জানোয়ারের দুধ (কৌটার দুধ) খেয়ে মানুষ হয়েছ সুতরাং তোমাদের চরিত্রে জানোয়ারের প্রবৃত্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ছেলেটি উত্তেজিত হয়ে বললো কেন আপনি বাজে কথা বলছেন? তখন বৃদ্ধ লোকটি অতি বিনয়ের সাথে ছেলেটিকে বললেন, আমি তোমার বাবার বয়সি একজন বৃদ্ধ লোক। কোন বিবেকে আমাকে রেখে তুমি এই সিটে বসতে পারলে? তোমাদের মানবিক অধপতন দেখে বড়ই কষ্ট হচ্ছে বাবা। আমরা তো মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছি তাই আমদের বিবেক এবং মমত্ববোধ এখনও অটুট রয়েছে। যাই হউক,ভবিষ্যতে নিজেকে শুধরে নিতে সচেষ্ট হও বাবা।
আজ বিনয়ের সাথে সকলকে অনুরোধ করছি। আসুন আমরা অতীতের সকল অন্যায়/পাপের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট পানা চাই। নিজেদেরকে মানবিক গুনে বলিয়ান করি। এই মহা দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাষে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে সচেষ্ট হই। সকলেরই মনে রাখা উচিত কাফনের কাপড়ের কিন্তু পকেট নাই। করোনা যে কোন সময় যে কারও জীবন কেড়ে নিতে পারে। আসুন পরিষ্কার মনে, সমস্বরে বলি, হে মাবুদ আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আমিন।।