জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থীর নাম সিয়াম মো. আরাফাত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সিয়ামের গ্রামের বাড়ি নীলফামারি ডোমার উপজেলায়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হলের কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান প্রাধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান। মীর মশাররফ হোসেন হলের ১১৫/বি নং কক্ষ থেকে সিয়ামকে উদ্ধার করেন তার বন্ধুরা। উদ্ধারের পর সিয়ামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ডা. ধীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসক বলেন বলেন, সোয়া সাতটার দিকে সিয়ামকে চিকিৎসা কেন্দ্রে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি তিনি আগেই মারা গেছেন। আমরা যখন লাশ পাই তখন দেখেছি রশি গলার মধ্যে গেঁথে আছে, ফাঁস লেগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি গত সোমবার ভোররাতে তার নিজের ফেসবুকে ‘অনন্তকালের পথে’ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি মৃত্যুকে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে আধ্যাত্মিকতার ইঙ্গিত দেন। ধারণা করা হচ্ছে তার এই স্ট্যাটাসেই আত্মহত্যার সূত্র ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে হল কর্তৃপক্ষ জানায়, মাগরিবের নামাজের পর হলে ছাত্ররা তার রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কিছু একটা ঝুলছে। পরে জানালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর দেখা যায়, ফ্যানের সিলিংয়ের সঙ্গে সিয়ামের দেহ ঝুলে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, মাগরিবের নামাজের পর আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার রুমে গিয়ে দরজায় নক করেন সহপাঠীরা। সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিলে কক্ষের ভিতরে কিছু একটা ঝুলতে দেখেন তারা। পরে জানালার কাঁচ ভাঙলে ফ্যানের সিলিং এর সাথে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এসময় সহপাঠীরা কক্ষের দরজা ভেঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে জাবি মেডিকেলে নিয়ে আসে। মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিয়াম আত্মহত্যা করার আগে গত সোমবার ভোর রাতে তার ফেসবুক পোস্টে তিনি আধ্যাত্মিকতা চর্চার বিভিন্ন বিষয়, মৃত্যু, আত্মা, দেহ, জীবনের উদ্দেশ্য, মেডিটেশন ইত্যাদি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।
এদিকে, তার কক্ষে টেবিলের উপর সদগুরুর ‘ডেথ’ বইটি পাওয়া যায়। হলের অনেকের ভাষ্যমতে তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ মেডিটেশন করছিলেন। সিয়াম সেশন ড্রপ-আউট হয়ে ৪৭তম ব্যাচের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মৃত্যুর খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ছুটে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। এসময় তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
পরে রাতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের কাছে সিয়ামের লাশ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে মীর মশাররফ হোসেন হলের মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।