জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ মার্চ) রাত ১০টার দিকে গেন্ডারিয়ার মুরগিটোলা মোড় এলাকায় প্রথম দফায় এবং ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের (১৭ ব্যাচ) এক ছাত্রের ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই নিয়ে দ্বন্দ্বে স্থানীয়দের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। তখন এক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুই জনকে আটক করে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রাত ১১টার দিকে আবু সুফিয়ান ও শিহাব নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় মুরগিটোলা মোড়ে চা খেতে গেলে হঠাৎ স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের ৫০-৬০ জন ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশে অবস্থান করা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে তাদের ওপরেও আক্রমণ করে তারা।
গুরুতর আহত সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, চা খাওয়ার জন্য আমার বন্ধুর সঙ্গে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের আটকে কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করে। বানিয়ানগর থাকি বলতেই আমাদের ওপর অনেকগুলো ছেলে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরিহিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে আর মারতে থাকে। আমরা আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালেও পাশে অবস্থান করা পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে যায়নি পুলিশ। পুলিশ এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে বলেও জানান তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
হামলার শিকার শিহাব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মারধর করার পর পুলিশ এসে থামায়। কিন্তু বলতে থাকে তোরা জগন্নাথের স্টুডেন্ট এখানে আসছিস কেনো? এই কথা বলেই পুলিশ আমাকে মারতে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া দুই থানার ওসির সঙ্গেই কথা বলেছি। থানাই অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর পুলিশ যে শিক্ষার্থীদের ওপর হাত তুলেছে সেই ভিডিওটিও সূত্রাপুর থানার ওসিকে দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় আমাদের এখানে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। এটা সূত্রাপুর থানার অধীনে। তবে ঘটনার সময় সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিল। তারা মারামারি থামিয়ে দিয়েছে। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি।
সূত্রাপুর থানার ওসি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় ভিকটিম এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা ভিকটিম আসলে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। আর যেই দুইজনকে আটক করা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা চিহ্নিত করেছিল তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা নিয়ে তিনি বলেন, উত্তেজিত ঘটনা থামানোর জন্য পুলিশ বিভিন্ন সময় লাঠিচার্জ করে থাকে। হয়তো তখন সবাই কিছুটা আঘাত পেতে পারে। এ বিষয়ে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা এখনো পাইনি।