যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রবিবার (২৬ মার্চ) হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কর্তৃক প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পতাকা উত্তোলনের পরপরই উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯.৩০ টায় উপাচার্যের এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদগণের স্মৃতির প্রতি পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রশীদ, জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ। ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ, শিক্ষক—কর্মকর্তাগণের বিভিন্ন সংগঠন, হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ এর নেতৃবৃন্দ, কর্মচারী সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সকাল ১০ টায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে উপাচার্যের বাণী বিতরণ করা হয়। বাণীতে উপাচার্য বলেন, আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিন। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবসে আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা—বোনকে। স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সনের মার্চ এক মহাজাগরণের মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীকার আন্দোলন এ মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভুত্থ্যান, সত্তরের জাতীয় নির্বাচন, একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রিয় বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের মুক্তি পাগল মানুষ শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ। শুরু হয় আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম আর সাহসিকতার এক নতুন অধ্যায়। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত, ২ লাখ মা—বোনের সম্ভ্রম আর অগণিত মানুষের সীমাহীন দুঃখ কষ্টের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া।
তিনি বাণীতে আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অদম্য গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উপগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। আমি এসকল সাফল্যের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এরপর সকাল ১০ টা ০৫ মিনিটে টিএসসি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন উপাচার্য। ১০.১৫ মিনিটে টিএসসি এর নিচতলায় ২৫ মার্চ গণহত্যা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সহায়তায় এদেশে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণ্যতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এরকম হত্যাকান্ডের নজির আর কোথাও পাওয়া যাবেনা। যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদের সহায়তা ছাড়া এ ধরণের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটান সম্ভব ছিলনা। বিশ্বের ইতিহাসে এই হত্যাযজ্ঞ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তজার্তিক স্বীকৃতি চাই।
পরবর্তীতে শিশুদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং সকল প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন মাননীয় ভাইস—চ্যান্সেলর। বাদ জোহর হাবিপ্রবি’র কেন্দ্রীয় মসজিদে শহিদগণের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবন, প্রধানগেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্থর চত্তরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, ইতিহাসের জঘন্যতম অপারেশন সার্চলাইটের অধীনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছিল তার স্মরণে সারা দেশের সাথে সংগতি রেখে শনিবার দিবাগত রাত ১০.৩০ থেকে ১০.৩১ মিনিট পর্যন্ত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকারে ঢেকে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকলে ১ মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এ সময়ও উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তজার্তিক স্বীকৃতির দাবি জানান।