জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও নেই কোনো অগ্রগতি। সময় শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের কাজই শেষ করতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।
এখনো তদন্তের নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডিপার্টমেন্টের বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন অভিযুক্ত সে শিক্ষক। অভিযোগ পাওয়া গেছে অভিযুক্ত সে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে এটাও বলে বেড়াচ্ছেন যে, যারা আমার নামে অভিযোগ করেছে তাদেরই উল্টো বিচার করা হবে। আমার কিছুই হবে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা শঙ্কাবোধ করছেন।
বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টে আসা নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল কুমার সাহা বলেন, আমি যেহেতু পরীক্ষা কমিটিতে আছি তাই আমাকে চেয়ারম্যান স্যার (নূরে আলম আব্দুল্লাহ) বলেছেন ডিপার্টমেন্টে আসতে এবং ক্লাস ও ল্যাব নিতে। যদি আমি এটা না করি সেটাও একটি অপরাধের ভিতর পড়ে। তাই আমি এসে আমি আমার কাজ করি।
সেই শিক্ষকের ডিপার্টমেন্টে আসার বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরে আলম আবদুল্লাহ বলেন, তিনি তো সাসপেন্ড না। সাসপেন্ড হলে তখন আসতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের শঙ্কাবোধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির একটি সিদ্ধান্তে ১২ মার্চ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ঘটনার প্রমাণ চেয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভার এক মাস পার হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত দেরিতে বিভিন্ন অজুহাত দেখালেও এখনও কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি গঠিত কমিটি।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ওই ঘটনায় জানুয়ারির শুরুতে বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়ে বিভাগের মধ্যে রেখেই চেয়ারম্যান ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পরে বিভাগীয় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এজেন্ডার মধ্যে না রেখেই আলোচনা ছাড়াই ওই শিক্ষককে সকল ক্লাস-পরীক্ষা থেকে তিন বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে সেই সিদ্ধান্তের কপি পরীক্ষা কমিটি কিংবা বিভাগের অন্য কোনো শিক্ষককে দেওয়া হয়নি। এমনকি শাস্তির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও অবগত করেনি বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘তদন্তের কাজ চলমান আছে। তদন্ত কমিটির দুটি মিটিং হয়েছে। প্রশ্ন যারা করেছিল তাদের সাথে কথা বলেছি পরীক্ষা কমিটির সাথেও কথা বলেছি, অভিযুক্ত শিক্ষককে ডেকেও আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি এভাবেই আগাচ্ছি। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা বলা হবে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’
কবে নাগাদ এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’এটা তো এভাবে বলা যায় না। তদন্তের অনেকগুলো কাজ আছে। এই ঘটনায় কারা প্রশ্ন করেছে, কারা মডারেশন করেছে। কবে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে এসব বিষয় দেখতে হচ্ছে। আমরা গুরুত্বসহকারেই তদন্তকাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।’
২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ‘ক্লাসিক্যাল ইলেকট্রো ডাইনামিকস : ১’ কোর্সের ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা চলার সময় নকলসহ ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন পিংকিকে আটক করেন দায়িত্বরত শিক্ষকরা। পরে তার সঙ্গে থাকা নকলের অধিকাংশ প্রশ্নের সঙ্গে মিল থাকায় বিভাগের শিক্ষকরা ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রশ্ন সরবরাহকারী হিসেবে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুয়েল সাহার নাম বলেন পিংকি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছেন তিনি। তার অধীনে যাদের ল্যাব আছে তাদের তিনি আড় চোখে দেখেন এবং শুধু ভুল ধরেন। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক বিভাগের ট্যুরে বান্দরবনে গিয়ে ঐ শিক্ষার্থীকে কোলে তুলেছিলেন।