প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শাসনামলের সাক্ষী ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। ১০৮ বছর আগে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বুকে চালু হয়েছিল ব্রিজটি। ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের গবেষণায় বলা হয়, লৌহকাঠামোর রাসায়নিক ধাতুর গুণাবলি আরও ২৫ বছর বলবত থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫,৮৯৪ ফুট (১.৮ কিলোমিটার)। সর্বমোট ১৫টি গার্ডার বা স্প্যান রয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ মিটার করে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড ব্যারন হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ সেতু উদ্বোধনকালে সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেলস্ আবেগভরে বলেছিলেন, যে সেতু নির্মাণ করে গেলাম উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এ সেতু চির যৌবনা হয়ে থাকবে। কথাটি কতখানি যে সত্য তার প্রমাণ গত ২০২৩ সালের ৪ মার্চ ১০৮ বছর পার করার পরও সেতুর গায়ে বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান হতে বোমা নিক্ষেপ করলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর যথারীতি ভারত সরকার স্প্যানটি নির্মাণ করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। গার্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ট্রেন পরিচালক (গার্ড) আফজাল হোসেন জিন্নাহ ভারতগামী ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন নিয়ে ৩৭ বছর ধরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ করার আগেও যেভাবে চলেছি এখনো একইভাবে চলছি। কোনো ঝাঁকুনি, শব্দ, ঝনঝনানি বা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’সহ বিভিন্ন ট্রেন ৪০ বছর ধরে চালাচ্ছেন এল এম (ড্রাইভার) তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হলেও এখন ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। আগের মতোই চলছি, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হয় না। পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশল আব্দুর রহিম জানান, নির্মাণের সময় আয়ুষ্কাল ১০০ বছর ধরা হয়েছিল। ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের গবেষণায় বলা হয়, লৌহ কাঠামোর রাসায়নিক ধাতুর গুণাবলি আরও ২৫ বছর বলবত থাকবে। ফলে ব্রিজ ২০৪০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকছে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার ব্রিজ রং করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হয়। ইতিমধ্যেই সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ৩০০ মিটার অদূরে উজানে নতুন করে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। রেলের আমব্রেলা প্রকল্পের অধীনে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী জানিয়েছেন।