পাবনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গাদাগাদি করে মেঝেতে অথবা কড়িডোরে রোগ যন্ত্রনায় কাতরানো রোগীরা অন্তত: বিছানায় থাকার সুযোগ পাচ্ছে। কুকুর বিড়ালের সাথে রাত কাটানোর অবস্থাটা খুব একটা চোখে পড়েনা এখন। যদিও প্রায় আঠাশ লক্ষ অধিবাসীর পাবনায় মধ্যম মানের স্বাস্থ্য সেবা পাবার একমাত্র ভরসা এ জেনারেল হাসপাতালটি। ফলে রোগীর আধিক্য প্রতিদিনই থাকে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত। সে কারনে চেষ্টা করেও এখনো পুরোপুরি বিছানা দেবার সামর্থ হয়না কর্তৃপক্ষের। জানালেন, হাসপাতালে প্রায় দুই মাস আগে যোগদানকৃত সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরে পূর্বের জমে থাকা আবর্জনা করা হয়েছে পরিষ্কার। ওয়ার্ড গুলোর ভেতর স্বাস্থ্য সম্মতভাবে পরিক্ষার পরিছন্ন রাখা হচ্ছে এবং ওয়াস করা হচ্ছে জীবানু নাশক দিয়ে। কিন্তু হাসপাতাল চত্বর ও ওয়ার্ড অভ্যন্তরে এত সুন্দর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলেও অত্যান্ত নাজুক অবস্থা পরিলক্ষিত হয় শৌচাগারে। নোংরা, দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। ব্যবহারের অযোগ্য শৌচাগার গুলো দ্রুত স্বাস্থ্য সম্মত ও পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার দাবী জানান রোগীরা। পাবনা জেনারেল হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও গড়ে প্রায় চারশত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। ফলে স্থান সংকুলান না হলে মেঝে এবং কড়িডোরে তাদের থাকতে হতো। বর্তমান সহকারী পরিচালক যোগদানের পর এ মানবেতর পরিস্থিতি দেখে অকেজো পরিত্যাক্ত বেড মেরামতের উদ্যেগ নেন। যে বেড গুলো অন্যান্য হাসপাতালে মাটিতে ফেলে রেখে রোদ-বৃষ্টিতে মাটিতেই মিশে যেত। সরকারী বিধি জটিলতায় এ গুলো দ্রুত নিলাম করাও কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব না। সেই অকেজো বেড থেকে ৮২টি বেড কিছু মেরামত করে থাকার উপযোগী করে তোলেন। পরবর্তীতে সেগুলো করিডোর ও ওয়ার্ড অভ্যান্তরের খালি জায়গায় স্থাপন করে রোগ যন্ত্রনার রোগীদের মেঝে থেকে বেডে থাকার ব্যসস্থা করেছেন। জানতে চাওয়া হলে উপ পরিচালক জনাব হাসান নবচেতনাকে বলেন, এই ৮২টি অকেজো বেড মেরামত করে ব্যবহার উপযোগি করতে ষাট হাজার টাকর মত ব্যয় হয়েছে। অথচ এ পরিমান বেড খরিদ করতে সরকারের আট লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হতো। প্রতিটি ওয়ার্ডে দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে চাহিদামত দশ থেকে পচিশটা করে খাট দেয়া হয়েছে। তারপরেও খাটের স্বল্পতা রয়েছে রোগীর চাপে অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আরো কিছু বেড রোগীদের কল্যানে মেরামত করা গেলেও ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা স্বল্পতার কারতে স্থাপন করা সম্ভব না। কারন ওয়ার্ড গুলো নির্মান করা হয়েছে নির্ধারিত বেডের ধারন ক্ষমতার উপযোগি করে। হৃদরোগ ওয়ার্ডের কনস্যালটেন্ট ডা. শাহরিয়ার কবির জানান, তার ওয়ার্ডে নির্ধারিত বেড আটটি হলেও আরো ছয়টি বেড সংযোজন করা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগে পুরুষ ৪২ ও মহিলা ৩২টিসহ মোট নির্ধারিত বেড রয়েছে ৭২টি। কিš‘ প্রতিদিন প্রায় দেড়শত রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। গায়েনী, শিশু ও সার্জারী বিভাগের অবস্থা একই রকম। জানালেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগন। সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, বর্তমানের সহকারী পরিচালক যোগদানের পর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে ভিজিট করেন এবং রোগীদের খোজ খবর নেন ও চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন। আউটডোরেও তিনি পরিদর্শন করে রোগীদের খোজ খবর নিয়ে থাকেন। হাসপালে সরকারী পরিক্ষা নিরিক্ষা ও সরবরাহকৃত সরকারী ওষুধ প্রাপ্তিতে তিনি নিজে তদারকি করে থাকেন। ফলে দালালের দৌরাত্ব কমেছে বহুলাংশে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, আমি যা করি সেটা সরকারী দ্বায়িত্ব বোধ থেকেই করে থাকি। আমি যোগদানের পর কিছু ব্যবস্থাপনা আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে, সে কারনে আমি সে গুলো সংস্কার করতে শুরু করেছি। হাসপাতালের কোন কাজ করতে নিলে আমার সহকর্মি ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করেই করে থাকি। আমার কর্মকালীন সময়ে রোগীদের সুষ্ঠ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমি সচেষ্ট থাকব।