কালের বিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে কেশ কারিগরদের গতিধারায় লেগেছে নতুনত্বের ছোয়া। মানুষকে দেখতে সুন্দর করা যাদের কাজ , তারাই নরসুন্দর।যাকে আমরা বলি নাপিত, বা শীল।
মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশের অন্যতম একটি হলো চুলের সৌন্দয বৃদ্ধি। সভতার নব যাত্রার শুরু থেকেই মানুষ মাত্র সৌন্দর্যের পিয়াসী। যুগে যুগে এই চুল নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। চুল-দাড়ি কাটা-ছাটা, সেভ করা প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজের একটি অংশ। সেই কারনেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের প্রয়োজনয়তা ছিল অনন্য। আগে হাট-বাজারের বট বৃক্ষের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে কিংবা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে হাটু চেপে নাপিতরা চুল-দাড়ি কাটতো। সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন সচারাচর আর তেমন চোখে পরে না।
পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন হাঁটে-বাজারে আকড়ে ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার পেশাকে হাতে গুনা কয়েক জন নরসুন্দরা।বেড়া উপজেলার বাধের হাটে পিড়িতে বসা হাটুরে সেলুন থেকে জানান উপজেলার মাসুমদিয়া ইউনিয়ের বয়োবৃদ্ধ নরসুন্দর শ্রী ওপেন চন্দ্র শীল বলেন, বাবার কাছ থেকে যখন কাজ শিখি দু-পয়শা সেভ ও তিন পয়শাঁয় চুল কাটা শুরু করেছি। বর্তমানে সেফ ১০/১৫ টাকা ও চুল কাটা ২০/২৫ টাকা। সারাদিন কাজ শেষে ৪০০ শত থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন হয়, বাপ-দাদারা এই পেশা করে গেছে তাই ধরে রেখেছি। আরেক নরসুন্দর শ্রী নরেশ শীলে এর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় হাটুর নিচে নিয়ে চুল কাটার রহস্য কি। তিনি জানান রহস্য কিছুই না কাস্টমার চুল কাটাতে কাটাতে যখন ঘুমে ঠুলে পরে তখন কাজ করা কঠিন হয়ে যায় তাই হাটুর নিচে করে চুল কাটা হয় যাতে নরাচড়া করতে না পারে।
কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য অনেকটা বিলুপ্তির পথে। এখন যেখানে-সেখানে দোকান , মার্কেট হওয়ার হাঁটে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য কেনার চাহিদার পাশাপাশি মানুষের উপস্হিতিও অনেকাংশে কমে গেছে। হাঁট-বাজারে এখন আর ভ্রাম্যমান নরসুন্দরদের দেখা যায় না। তাই দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহামান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পেশা নরসুন্দর বা নাপিত।