দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ হাওর হাকালুকি হতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পরিকল্পিতভাবে হাওরের উন্নয়ন হলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা হাওরেরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন এমনটাই মনে করছেন হাওর সংশ্লিষ্টরা । কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে পর্যটনে সম্ভাবনাময় এই হাওর অবহেলায় পড়ে আছে বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে। এদিকে একটি মহলের বিরুদ্ধে প্রতি বছর হাওরের বিল শুকিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট করার অভিযোগও আছে। অতিথি পাখি শিকারের অভিযোগও হরহামেশাই পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও দেশের অন্যতম মিঠা পানির মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত হাকালুকির আয়তন ১৮.১১৫ হেক্টর। হাওরে দিন দিন কমছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হাকালুকিতে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ থেকে বর্তমানে ৪৪ প্রজাতিই বিলুপ্ত। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন, প্রজননের সময় অবাধে মাছ শিকার, অভয়াশ্রমের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব দেশীয় মাছ দাবি সংশ্লিষ্টদের। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও হাওরের প্রতিবশে এবং জীব বৈচিত্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা বেসরকারি এনজিও সংস্থার তথ্য মতে, দেশের মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত হাকালুকিতে সরকারি ২৩৮টি বেসরকারি ৩৮টি বিল রয়েছে। এ হাওরে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিল। যা বিলুপ্ত হতে হতে বর্তমানে ৬৩ টি প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় ৪৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম চিতল, পাবদা, রানী মাছ, আইড়, চাপচেলা, মেনী মাছ, বাঁশপাতা, গুজি আইড়, দেশি সরপুঁটি, ফেনী মাছ, বাতাসি ও বাঁশপতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সুস্বাদু মাছ। সম্প্রতি হাকালুকি হাওরে বেড়াতে যাওয়া সাংবাদিক ইউনুছ চৌধুরী বলেন, ‘সীমাহীন বিশালতা, শূন্যকে অনুভব করার নীরবতা, হৃদয় উদাস করা পাখির কূজন, সবুজ মাঠে গরুর পাল নিয়ে নিরুদ্বেগ ঘুরে বেড়ানো, বিলের পানির উপরে বাঁশের মাথায় বক, কালিম বা পানকৌড়ির তপস্যা ভেঙ্গে হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ এমন অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাকালুকিতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। আছে বর্ষায় বিশাল জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা হিজল-করচ বন, আবার শীত মৌসুমে হিজল-করচ-তমালের নিচে গা ছমছমে গুল্মলতার বিশাল ঝোপ-জঙ্গল। পরিকল্পিত ভাবে হাকালুকির উন্নয়ন হলে সরকারের রাজস্বর পাশাপাশি স্থানীয়দের অনেক কর্ম সংস্থান হবে।’ এ প্রসঙ্গে হাকালুকির কবি খ্যাত সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি কালাম আজাদ বলেন, ‘সমুদ্র দেখার আগে, আমাদের নিকট হাকালুকি ছিল সমুদ্র। হাকালুকির পাড়ে আসলে নিজের অতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।’ তিনি হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি হাওর রক্ষায় সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানান। হাকালুকিতে বেড়াতে যাওয়া মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান জানান, হাকালুকির সৌন্দর্য অপরূপ। এ সৌন্দর্য দেখতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। হাকালুকির নাগুয়া বিলে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এমনটা করা জরুরি বলে তার মন্তব্য। আধুনিক ট্যুরিজম এন্ড ট্রাভেলস এর স্বত্ত্বাধিকারী আশরাফ আলী বলেন, পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে হাকালুকি হাওরে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বিল থেকে অবাধে মাছ আহরণ বন্ধ করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে হাওরে বেড়ানোর জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা জরুরি। হাকালুকি যুুব সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এম এস আলী বলেন, চারপাশ দিয়ে হাওরে প্রবেশের রাস্তার উন্নয়ন জরুরি। এক্ষেত্রে ডুবন্ত রাস্তা করা যেতে পারে। বাইরের পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য হাওরের কয়েকটি পয়েন্টে রেস্ট হাউজ করলে পর্যটক আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, হাকালুকি হাওর নিয়ে আমাদের মাস্টার প্ল্যান রয়েছে। শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।