খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ২৫ মে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক। খুবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে তিনিই বর্তমান নিযুক্ত দ্বিতীয় উপাচার্য। তিনি খুবির উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম থেকেই মেধা, প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সাথে দাপ্তরিক, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক সার্বিক বিষয়ে গতিশীলতার মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। তিনি খুবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিন পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় করেন। উক্ত মতবিনিময় সভায় তিনি খুবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি অর্জন ও অগ্রগতি এবং প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলো গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। যার ফলশ্রুতি মোতাবেক ইতোমধ্যে তিনি ওয়াদার শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খুবির উপাচার্যের প্রাথমিক পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে ছিল বিশেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টিতে ৩৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি নবীন শিক্ষক-গবেষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সাথে যৌথ গবেষণার কার্যক্রম জোরদার করা এবং খুবির বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিনের কারিকুলাম নিয়মিত যুগোপযোগী,আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের উপর গবেষণা এবং বিশেষ করে খুলনা উপকূলীয় এলাকায় নানামুখী সমস্যার উপর গবেষণা জোরদার, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার খুলনা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরির্তনজনিত দুর্যোগের সাথে অভিযোজন সম্পর্কিত গবেষণা, সুন্দরবন সম্পর্কিত বহুমুখী গবেষণা জোরদারসহ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুন্দরবন গবেষণার আন্তর্জাতিক অধিক্ষেত্র তৈরি করা। সে লক্ষে অবকাঠামো ও গবেষণাগার তৈরি ছড়াও পরিকল্পনায় ছিল- নবীন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি, উন্নত গবেষণায় ক্ষেত্রে খুবির শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে গবেষণা বরাদ্দ ও বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদেরসহ-শিক্ষাকার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগার স্থাপন, মাঠ গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে নতুন প্রকল্পে নতুন হল নির্মাণ এবং শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং , ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রমের উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ। এ ছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইদের বিষয়ে মতামত গ্রহণ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন। উল্লিখিত পরিকল্পনাগুলো স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভাজন করে তিনি ইতোমধ্যে শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখ্য বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পরেও উপাচার্য হিসেবে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ,অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রমের সুবিধার্থে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি,গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, মাস্টার্স, ব্যাকলগ পরীক্ষা ও থিসিস ডিফেন্স যা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ঘোষণার ফলে বন্ধ রাখা হয়েছিল সেটিও তিনি পুনরায় চালু করার নির্দেশনা প্রদান, কোভিড পরবর্তী আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলের অবস্থানের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। একই লক্ষে তিনি একাডেমিক ভবনসমূহেও সংস্কার এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান। এছাড়াও তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ ও কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং (ডি-নথি) ব্যবস্থা চালুর প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি খুবিকে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টির লক্ষে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন এবং নির্মাণাধীন ভৌত অবকাঠামোর কাজ ত্বরান্বিত করেন। উল্লিখিত উদ্যোগগুলো পরবর্তীতে সফল কার্যক্রম ও ফলপ্রসূ হয়। যারই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং, কিউএস র্যাংকিং, টাইমস্ হায়ার এডুকেশন র্যাংকিং এ স্থান করে নেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতায় গত বছর ইউজিসির এপিএ মূল্যায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৫.৪৭ পেয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করে। এর বাইরেও স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশ ও তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তায় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।