কৃষক বাবার ছেলেহাচান মোল্যা। বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে হাফেজ বানাবেন। ভর্তি করেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। ভালভাবেই চলছিল লেখাপড়া। একদিন নিজ বাড়ির আম পাড়তে উঠলে গাছ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন এই কিশোর। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার এক পর্যায়ে ডান হাতটি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিস্ব হয়ে যান পরিবার। লেখাপড়া আর করা হয়নি কিশোর হাচানের সংসারের অভাবে এক হাত নিয়ে ১২ বছর বয়স থেকে ভ্যান চালান। প্রথমে পা দিয়ে ভ্যানের প্যাডেল মারেন ৮ বছর পরবর্তীতে ঋণের টাকায় কেনা ৫ বছর ধরে অটোভ্যান চালান। তাঁর আয়ে কোনো রকম চলে চার সদস্যের পরিবার। আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কুশুমদী গ্রামের আবু মোল্যার ছেলে হাচান মোল্যা। বাবা মা হারা এতিম হাচানের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। বাবার রেখে যাওয়া জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। ১২ বছর বয়সী ছেলে মারুফ মোল্যা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে হোসনা খানম ১১ মাস বয়স। হাচান মোল্যা বলেন, ‘এক হাত নিয়ে ৮ বছর ধরে পা দিয়ে ভ্যান চালাতে অনেক কষ্ট হতো। ঋণ নিয়ে অটোভ্যান ক্রয় করে ৫ বছর ধরে চালা”িছ। ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪৫০ টাকা আয় হয় । প্রতিবন্ধী ভাতা পাই মাসে ৮০০ টাকা। নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে সংসার চালাতে কষ্টকর হয়ে হয়ে পড়েছে। আমার অনেক কষ্ট হলেও ভ্যান চালিয়ে ছেলে কে লেখাপড়া করাতে চাই। যতদিন শক্তি আছে আল্লাহর রহমতে এই ভ্যান চালাতে চাই।’ তাঁর ভ্যানের নিয়মিত যাত্রী একই গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, আম গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাচানের ডান হাতটি হারান। সে অটোভ্যান চালায়। আমি তাঁর ভ্যানের নিয়মিত যাত্রী। আমার কোনো কাজ থাকলে তাঁকে দিয়েই করাই। যে ভাড়া হয় সব সময় অতিরিক্ত টাকার দেওয়ার চেষ্টা করি। আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সারেকুল হাচান নয়ন বলেন, এক হাত নিয়ে হাচান অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালা”েছন। এটি সমাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজের বৃত্তবানদের উচিত তাঁর পাশে দাড়ানো। ইউএনও রফিকুল হক বলেন, হাচান মোল্যাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।