রংপুরে মেয়ে কে দেখার কথা বলে ছেলে কে ৬ ঘন্টা আটকের পর বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মেয়েপক্ষের ভাড়া করা গুন্ডাবাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ২৫ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্য করে কাবিনায় সহিস্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগে সাংবাদিক সন্মেলন করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। সোমবার বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছেলে কাউনিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডাঃ তারিক মো: আহসান। তিনি জানান, ১ জুন ২৩ ইং তারিখে আমার ফুফাতো ভাই আশরাফুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মেয়ে পক্ষের যোগ সাজোষে মেয়ের মায়ের সাথে দেখা করার নাম করে আমাকে অপহরণ করে নিয়ে ৬ঘন্টা আটকের পর হুমকি, ভয়ভীতি, এবং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ২৫ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্য করে অপরিচিত মেয়ে রুকাইয়া শহীদ স্পর্শ পিতা – মোঃ শাহিদুল ইসলাম পিন্টু; মাতা- সাবিনা ইয়াসমিন বিন্দু; গ্রাম: সোনাকান্দর, থানা: পীরগঞ্জ, জেলা: রংপুর এর সাথে বিবাহের কাবিনে সহী-সাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় অন্যথায় প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো না মর্মে হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমার এলাকার কিছু মানুষ সার্বক্ষণিক আমাকে এই বিবাহের জন্য প্রসঙ্গ হাজির করে। আমি তাদেরকে সরাসরি বলে দেই যে, আমি বিয়ে এখনও করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। পরবর্তীতে অন্য একাধিক গ্রুপ আমাকে এই বিবাহের জন্যে চাপাচাপি করতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়ের মা নিজেই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং তখনও আমি বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। সবশেষে আমার ফুফাতো ভাই আমাকে বলে যে বিয়ে করতে হবে না তুই শুধু একবার মেয়ের মায়ের সাথে দেখা কর। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১ জুন ২৩ তারিখে আমি আমার কর্মক্ষেত্রে যাবার জন্য যখন প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলাম তখন আশরাফুল বলে যে, আমি রংপুরে আছি তুই অফিস যাবার সময় দেখা করে যাস। তার কথামত আমি রংপুরে আসার পর আমাকে ডিসির বাসভবনের সামনে ক্যাশপিয়া রেস্টুরেন্টে যেতে বলে। আশরাফুল মেয়ের মায়ের সাথে পরিচয় করে দেয়। আমি মেয়ের মাকে প্রথমেই জানাই যে, এখনে আমি বিয়ে করব না আপনাকে যারা বিয়ের কথা বলছে তারা ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে। এরপর তারা বাহির থেকে কিছু লোক এনে সেখানে গন্ডগোল করার চেষ্টা করে। সেখানে ঝামেলা করতে না পেরে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আমরা চলে আসার জন্য বের হই। তখন রিজু নামের একজন বলে যে এক ভাইয়ের বাসায় চা খেয়ে আমরা সবাই চলে যাব। আমি যেতে না চাইলে রিজু এবং আশরাফুল এক প্রকার জোর করেই আমাকে সেখানে নিয়ে যায়। ঐ ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার পরে আমি বুঝতে পারি এটা ঐ মেয়ের কোন আত্মীয়র বাসা। এর পর ওই বাসার একটি কক্ষে আটকে রেখে ৬ ঘণ্টা জোর পূর্বক আটকে রেখে আমাকে কবিন নামায় সই করতে বাধ্য করে।
ডাঃ তারিক মো: আহসান আরো জানান, আমি উল্লেখ করতে চাই যে আমার বাবা-মা দুজনই পরলোকগত হয় আমার বোন ও ছোট ভাইয়ের সাথে পারিবারিক বিভিন্ন কারণে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। এবং এই দূরত্বের কারণে কুচক্রী মহল আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে শুধুমাত্র আমার আশপাশে আমার পারিবারিক বন্ধন না থাকার কারণে। আমি প্রাথমিকভাবে এই বিষয়গুলো না বোঝার কারণে তাদের তৈরি ফাঁদে পা দেই এবং তারা জোরপূর্বক আমাকে বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জড়িয়ে আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের ছক তৈরি করে। প্রিয় ভাইয়েরা আমার, প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর দেওয়ার পর আমি আনুমানিক রাত ১০ ঘটিকায় আমার নিজ বাড়ি চাতরাতে চলে যাই। উল্লেখ করা প্রয়োজন তার সাথে কোন স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্ক স্থাপন হয়নি। পরবর্তী কয়েকদিন আমি উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকি। খাওয়া গোসল ছাড়াই আমার দিন কাটতে থাকে। আমি কোন ভাবেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারি না। আমার ঐ ফুফাতো ভাই আশরাফুলের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করলে সে আমাকে বলে এখান থেকে বের হবার কোন সুযোগ নেই। এখান থেকে বের হলে হাড্ডিগুড্ডি থাকবে না তুই এই বিয়ে মেনে নে’। আমি থানায় যাবার কথা বললে সে বলে যে, মেয়ের বাবা অনেক প্রভাবশালী তুই পারে উঠবিনা এবং পুলিশ তোর কথা শুনবে না। ছাড়াছাড়ির চিন্তা পরে করবো আমরা।
এই তথ্য আশরাফুল মেয়ের বাসায় বলে দিলে তারা আমাকে বউ তুলে নেবার চাপ দেয় এবং তড়িঘড়ি করে নিজেরাই একক ভাবে ১ লা জুলাই বিয়ের অনুষ্ঠনের দিন ও তারিখ ঠিক করে। এই অবস্থায় আমি আরো ভেঙে পরি এবং নিজেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেই এই জবরদস্তি মূলক বিয়ে হতে বের হবার। আমি কোন অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে এই ডিভোর্স পেপারে সহী স্বাক্ষর করি। এই ডিভোর্স এর কার্যক্রম আমি দিনাজপুর জেলা থেকে সম্পাদন করি। এর পর আমি আমার কর্মক্ষেত্র হতে ছুটি নিয়ে মানসিক অবস্থা খারাপ থাকায় একা সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমি শুনেছি এই সময়ে মেয়ের বাবা আমার কোন এক আত্মীয়কে চাপ দিয়ে পীরগঞ্জ থানায় জিডি করায়। এর ফল শ্রুতিতে আমার আত্মীয়-স্বজন, আমার একজন শিক্ষক, ডিভোর্সের কাজী এবং সাক্ষীদের থানা পুলিশ ও মেয়ের বাবার দলীয় লোকজন দিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মেয়ের বাবা স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় অনৈতিক ভাবে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে।এইসব নেতারা আমাদের সকলের মাতৃতুল্য অভিভাবক ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে যা চরম ভাবে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এমনতর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
আমার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমি অনাগত আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছিলাম। চারিদিকে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। আজ কর্মক্ষেত্রে ফেরার সময় আবারও আমি চিন্তিত, ভীত, ও শঙ্কিত। সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে তারা আমার পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করেন। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হঠকারী সিদ্ধান্তে যেন আমার স্বাভাবিক জীবন চলাচল বিঘ্নিত না হয়। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষদের জানালাম এবং আশা করি আমার নিরাপত্তার স্বার্থে আপনারা আমার সাথে থাকবেন।