উত্তরাঞ্চল থেকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রংপুরের ছাত্র-জনতা। তৃতীয় দিনে আজ বুধবার এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করায় দুর্ভোগে পড়েন শত শত যানবাহনের যাত্রীরা। দাবি আদায় না হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের ১৬ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে রেলপথ ও সড়ক অবরোধসহ রংপুর বিভাগ অচল করার মতো কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার বেলা ২টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মর্ডাণ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লালবাগের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) হয়ে মডার্ন মোড়ে যান। একই দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলেও আন্দোলনকারীরা ছাত্র-জনতার ব্যানারে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। দুদিনে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগসহ তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—সুষম উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের দুই বিভাগ থেকে কমপক্ষে দুজন করে চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমলা ও কর্মকর্তা নিয়োগে আঞ্চলিক বৈষম্য করা যাবে না, সেই সঙ্গে প্রত্যেক উপদেষ্টাকে কার্যক্রমের অগ্রগতি সাপ্তাহিকভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, বিতর্কিত ও জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করেন না, এমন কোনো উপদেষ্টাকে অন্তর্র্বতী সরকারে রাখা যাবে না। নীতি প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নিতে হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক আশফাক আহমেদ বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের ১৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের হলেও উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা থেকে একজনকেও নেওয়া হয়নি। এটা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে বৈষম্য হচ্ছে। অন্তর্র্বতী সরকার এভাবে চললে আঞ্চলিক বৈষম্য আরও বাড়বে। তাই আমরা চাই অতি দ্রুত রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নেওয়া হোক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের অন্যতম সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘২৪’ এর গণ-অভ্যুত্থানের সূতিকাগার রংপুর। রংপুরের বীর সন্তান আবু সাঈদের রক্তের বিনিময়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শুরু হয়েছিল এই রংপুরের মাটি থেকেই। ১০ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুরে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রংপুর হবে দেশের সেরা এক নম্বর জেলা। কিন্তুু রংপুর অঞ্চলের জনগণের হয়ে কথা বলার সরকারে একজনও উপদেষ্টা নেই। আবু সাঈদের জন্মভূমি রংপুরকে চরম অবহেলা করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের আশ্বাস ও উপদেষ্টা নিয়োগ করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ উত্তরাঞ্চলের যোগ্য একাধিক ব্যক্তিকে উপদেষ্টা করার দাবি জানান। এ সময় তারা বলেন, ‘বৈষম্য বন্ধ কর’ ‘আখতার হোসেনকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চাইসহ নানা স্লোগান দেন। সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে পরে কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। মুহূর্তেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।