প্রতি বছর বৈশাখের শেষের দিকে ও জৈষ্ট মাসের প্রথম দিন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের বটতলায় এ মেলা বসে। তাই সোমবার থেকে নিশিকালি পূজা উপলক্ষে সোমবার থেকে মেলা শুরু ও মঙ্গলবার পূজাও শেষ ও মেলাও শেষ । তবে ঠিক কবে থেকে বটগাছ তলায় এই বৈশাখী মেলা বসে তা কারও জানা নেই। তবে প্রাচীনকাল থেকেই এ মেলার প্রচলন বলে ধারণা স্থানীয়দের। মেলায় প্রায় চার দশক ধরে সিংগারা , পুড়ি, চপ, বিক্রি করেন হাসেম । তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই এই মেলা দেখে আসতেছি। আমার বাপ দাদারাও দেখে আসছেন। তারাও বলতে পারেননি এই মেলা কবে থেকে শুরু হয়েছে।’ মাটির হাড়ি পাতিল, পুতুল, খেলনা, থেকে শুরু করে মুড়ী, মুড়কি, বিন্নি ধানের খৈ, মিষ্টি বাতাসা, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, সাজ সরঞ্জাম এমনকি বাদ্যযন্ত্রের পসরাও বসে এই মেলায়। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড় ছিল উপচে পড়ার মতো। বেচা কেনাও ছিল জমজমাট। মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার জন্য। তাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের তালিকাও তৈরি হয় এই মেলাকে ঘিরে। মেলায় মিজানুর, বাদশা ও দাউদ, রহিম এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘মেলা থেকে গৃহস্থালির অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয়। তাই মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। ’মেলা থেকে কুলা, পিঁড়ি, পাখা, ও মাটির পাতিল কিনেছেন তারা। বাবার সাথে মেলায় ঘুরতে এসেছে তামিম নামের এক শিশু। মেলা থেকে একটি খেলনা গাড়ি কিনে অনেক খুশি সে। কথা হলে তামিম বলে, ‘মেলা থেকে ভেকু (মাটি কাটার খেলনা যন্ত্র) কিনেছি। বাড়ি গিয়ে মাটি কাটব। বাঁশি কেনার পর ঢোলের জন্য বায়না করেছে তামিম নামের আরেক শিশু। কথা হলে তামিমের বাবা সেলিম শেখ বলেন, ‘প্রতি বছর এই মেলা থেকে খেলনা কিনে দেব বলে ছেলেকে আশায় রাখি। তাই যা চায় তাই কিনে দেই।’ এতে ছেলে অনেক খুশি হয় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান বলেন, কবে থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারবে না তবে আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই মেলা। এই মেলায় ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা ও মাগুরা জেলার মোহাম্মাদপুর এবং শ্রীপুর উপজেলাসহ আরো বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসে বেচা বিক্রি করতে। মেলাকে ঘিরে প্রতিটা বাড়িতেই আসে আত্মীয়-স্বজন, জামাই সহ আরো অনেকে। আমি আমার কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মেলায় আগত সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। পূজায় ও মেলায় শান্তি, শৃংখলা রক্ষা করার জন্য বিট পুলিশিং অফিসার এস. আই. সান্টু দেব তার ফোর্স সহ মধুখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সদা-সর্বদা তৎপর আসেন। তারা বলেন মেলায় কোন তাস , জুয়া সহ কোন অনৈতিক কার্যাকলাপ চলবে না। পরিশেষে পূজা কমিটির রতন কুমার দাস এর সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের বাড়ী এই গ্রামেই ছিল । বর্তমান রাজবাড়ী জেলায় ধুনচি পাড়া গ্রামে বসবাস করেন। শুধু প্রতি বছর পূজার সময় আসেন। তিনি বলেন সোমবার সকাল ৬টা থেকে নিশি কালী পূজা শুরু হয়ে মঙ্গলবার শেষ হবে। তিনি আরও বলেন এই পূজায় পাঠাবলি দেওয়া হয়। তাছাড়া এই পূজায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পূজারী ভক্তরা মনের বিভিন্ন আশা পূরনের জন্য এই পূজায় বিভিন্ন ফলফলালি ও মিষ্টি নিয়ে আসেন ও বিভিন্ন মানত পরিশোধ করেন। আরও জানা যায় নিশি নামে একটি মেয়ের স্বরনে নিশি কালী পূজা হয়ে আসছে এর আগে দুইটি বটগাছ নদীর ভাঙ্গনে নদীতে চলে গেছে । এটা আমার লাগিয়ে বড় করছি কবে মেলার জায়গা দিন দিন জমি কমে আসছে।