বিয়ের দাবিতে দীর্ঘ ৫ দিন যাবত ইতালি প্রবাসী ছেলের বাড়ির গেটে অবস্থান করার পর অবশেষে খ্রীষ্টান যুবতীর প্রেমের জয় হয়েছে । শনিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা দীর্ঘ সালিশ শেষে প্রেমিক অনিক দাস পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে বিয়ের সম্মতি জানালে সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। পরে ছেলে মেয়ের মিষ্টিমুখের পরে ছেলেকে মেয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানার ২০ নং রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের এমপি’র মোড় এলাকার বাসিন্দা ইতালি প্রবাসি অতুল এন্ড্রিকো দাসের ছেলে অনিক দাস (২৪) রুহিয়া ক্যাথলিক মিশন স্কুলে পড়াশোনা কালে আরাজি চিলারং গ্রামের জুয়েল দাসের কন্যা ববিতা দাস (২১) সহ পরিচয় থেকে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালে অনিক দাস ববিতা দাসকে এফিডেভিটমূলে ঘোষণা দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের তিন দিনের মাথায় অনিকের পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেওয়ার কথা বলে, তাদের মেয়ের বাড়ি হতে তুলে নিয়ে আসে। রুহিয়া ক্যাথলিক মিশনের ফাদারের কাছে নিয়ে যাবার কথা বলে, মেয়েকে অটোচার্জার রিকশায় তুলে দেয় এবং অনিককে অন্য একটি মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে আসে। রুহিয়া মধুপুর কালিতলায় আসার পর অনিককে অজানা জায়গায় গোপন করে রাখে এবং মেয়েকে ঠাকুরগাঁও আদালত পাড়ায় নিয়ে গিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাক্ষর করতে বলে। ববিতা দাস সাক্ষর না করার পরও তাদের তালাক হয়ে গেছে বলে জানিয়ে মেয়েকে তার পিতার কাছে ফেরত পাঠানো হয়।পরবর্তীতে ববিতা দাসকে রাজশাহীর এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের পর অনিক দাস মরিয়া হয়ে উঠে এবং ববিতাকে ডিভোর্স দিতে তার স্বামী বাবু চাপাচাপি করতে থাকে। এ নিয়ে ববিতার সংসারে শুরু হয় টানাপোড়ন। প্রেমিকা ববিতা জানায়, অনিক প্রতিদিন আমার সাথে ফেসবুক ম্যাসেন্জার, ইমু, হোয়াটসআপ ও মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে, আমার বিয়ে করার জন্য আমার ২য় স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। আমি দশ বাচ্চার মা হলেও অনিক আমাকে নিয়ে জীবন কাটানোর প্রস্তাব দিলে আমি বাসায় চলে আসি এবং আমার ২য় স্বামী বাবুকে তালাক দিই। অনিকের কথায় আমি আমার দ্বিতীয় স্বামী বাবুকে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছি। ববিতা আরও জানায়,অনিক আমাকে খুবই ভালবাসে। সে ইতালি থেকে আমার ভরণ পোষনের টাকা পাঠাত। আমার মোবাইলে অনিক ও আমার অনেক ছবি ও প্রয়োজনীয় তথ্যও এসএমএস ছিল। গত মঙ্গলবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার সময় অনিকের পরিবারের লোকজন আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে আটকে রাখে এবং আমার মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিয়ে সব কিছু ডিলিট করে দেয়। ববিতা অনশনের পূর্বে প্রেমিক অনিক দাস ওই মেয়েকে বিয়ে করার শর্তে গত মাসের প্রথমদিকে বাংলাদেশে আসে। যথারীতি ছেলের পিতা মাতা ও আত্মীয়রা বিয়ের পয়গাম নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যায়। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ মার্চ। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে ছেলের পরিবার ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়েতে আপত্তি জানালে এবং গোপনে অন্যত্র ছেলেকে বিয়ের চেষ্টা করতে থাকলে শুরু করলে মেয়ে অনশনে বসে। এদিকে দীর্ঘ ৫ দিন যাবত খ্রিষ্টান যুবতী ববিতা দাস প্রেমিকের বাড়ির গেটে অবস্থানকালে অনিককে তার পরিবার অন্যত্র সরিয়ে রাখে ।এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং অবস্থানকালীন সময়ে তার খাওয়া দাওয়ার ও দেখাশোনা করে। ১৫ এপ্রিল শনিবার সন্ধায় রুহিয়া থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি পার্থ সারথী দাস,সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ বাবু ও রুহিয়া থানার ওসি সোহেল রানা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ঘটনা নিরসনে এক সালিশ বসানো হয়। সালিশে দীর্ঘ আলোচনা শেষে ছেলে ও মেয়েকে পাশাপাশি হাজির করানো হয় এবং ২ পরিবারের লোকজনের বাইরে পুলিশ বেষ্টনীতে তাদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হলে প্রেমিক অনিক দাস ববিতা দাসকে বিয়ে করার সম্মতি প্রদান করে। রাত দেড়টার দিকে ছেলে ও মেয়ে উভয় উভয়কে মিষ্টি খাইয়ে সম্মতি প্রকাশ করে। এ সময় ৫দিন অনশনে থাকা ববিতা দাস, তার পরিবার পরিজনের মাঝে হাসি ফোয়ারা বয়ে যায়। সালিশে সমাধান দিতে পেরে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তি ও উৎসুক সাধারণ জনতা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রসঙ্গত,গত মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বিয়ের দাবিতে ববিতা দাস ইতালি প্রবাসী অনিক দাসের বাড়ির গেটে অনশন শুরু করে। একই জায়গায় দীর্ঘ সময়ে বসে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি।