ঠাকুরগাঁও জেলার ভরনিয়া হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আর এ অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পেরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন চাকুরী প্রত্যাশি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। অপরদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ করতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়েছেন একের এক মিথ্যার আশ্রয়। ঘুষ নিয়েছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। অভিযোগে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়া হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি ৩টি পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। আবেদন করেন ৩৭ জন। বিধি মোতাবেক ৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা কিন্তু তা করতে না পারায় পূনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। প্রথম বিজ্ঞপ্তির সত্যতা মিললেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তির কোন সত্যতা মিলেনি। নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ করেতে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই প্রকাশ পায় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তদের তালিকা। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত চেয়ে ঘুষ বানিজ্য বন্ধের জন্য আবেদন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে। অভিযোগকারি মো: বাবুল হোসেন বলেন, আমি জানতে পারি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নাসিম, অফিস সহায়ক পদে মাসুদ রানা এবং আয়া পদে আমেনা কে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে জন্য নিয়োগ পরীক্ষার দুইদিন আগে ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত সহ ঘুষ বানিজ্য বন্ধের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করি। কিন্তু আবেদন দিয়েও কোন লাভ হয়নি। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি জানতে পেরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করি। পরে স্কুলের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, অনেক টাকার বিষয় লোভ দেখিয়ে আমার কাছে কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে তারা অনেক টাকার বিনিময়ে ৩ জনকে নিয়োগ দেয়। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের নূন্যতম যোগ্যতা আছে বলে মনে হয় না। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির টিআর সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মোটা অংকের বিনিময়ে ৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনটি পদে প্রায় অর্ধ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের কবে থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও কেউ জানে না। অনিয়ম ঢাকতে আগের হাজিরা রেজিষ্টার বাদ দিয়ে নতুন করে হাজিরা রেজিষ্টার তৈরী করেছেন।
নিয়োগ পরীক্ষা এবং নিয়োগের বিষয় কিছুই বলতে পারেনি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ল্যাব অপারেটর নাসিম এবং আয়া আমেনা বেগম। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হকের কাছে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দূর্বলতার কথা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে সমস্যা হয়েছিল। নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে বিলটিল হয়ে গেছে। কবে থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ? সেটা আপনি পরে জানবেন। এটা শুনিয়েন না, এটা বলবো না। সভাপতি বলেছে সেটা আপনি বলবেন না। হাজিরা রেজিষ্টার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে বলেন, এগুলো রাণীশংকৈল উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কাছে আছে। উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সাথে একাধিকাবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। স্কুল ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, বিধি মোতাবেক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুস্বরণ করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন নিয়োগ কমিটির কেউ না!