ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় সয়াবিন তেল বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছে কৃষক। দিগন্ত জুড়ে মাঠের এক প্রান্ত থেকে দেখলে মনে হবে, এ যেন হলুদের সমুদ্র। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করেছেন কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আমন ধান কেটে জমিতে সরিষা বপন করা হয়। বোরো ধান লাগানোর আগে সরিষা ঘরে তোলা যায়। কৃষকরা সরিষাকে বাড়তি ফসল হিসাবে আবাদে আগ্রহী উঠেছেন। অনেক কৃষক সয়াবিন তেল বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে আবাদ করেছেন সরিষা। সরিষা আবাদে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ও বোরো ধানের ফলন ভালো হয়। এ বছর অধিক (উচ্চ) ফলনশীল আগাম জাতের সরিষার চাষ করছেন চাষিরা। এর মধ্যে বারি-১৪ জাত অন্যতম। গত বছর ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯শ ৭৫ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ৯শ ৮৫ হেক্টর নির্ধারণ করা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর। উপজেলায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে হলুদের সমারোহ দুলছে বাতাসের তালে তালে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। সরিষার মাঠে ইতোমধ্যে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও অধিক আগ্রহী হয়েছেন সরিষা চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও অধিক লাভবান হবে কৃষকরা এমনটি আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই ফসল চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি। এতে সেচ দিলেও চলে, না দিলেও ফলন কমে না। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষার দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, এক একর জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় সাত হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত। এতে অনেক লাভ হয়। এক একর জমিতে পনের থেকে ষোল মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ ৩ হাজার ৮শ টাকা দরে পনের মণের দাম দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৪শ টাকা। আর প্রতি একরে খরচ বাদে লাভ হয় ৫০ হাজার ৯শ টাকা। পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদাও পূরণ হয়। আছিম টানপাড়া গ্রামের কৃষক নাজমুল বলেন, তিনি সয়াবিন তেল বর্জনের ঘোষণা দিয়ে এক একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমন ধান আবাদের পর জমি পতিত থাকে। সরিষা আবাদে এক দিকে যেমন জমিন পতিত থাকে না তেমনি সারা বছরের তেল পাওয়া যায়। সয়াবিন তেল মানব দেহের জন্য বেশ ক্ষতিকর। সরিষা আবাদ করলে সয়াবিন তেল কেনা থেকে বিরত থাকা যায়। কৃষকদের মধ্যে গ্রুপ ভিত্তিক তেল তৈরির মেশিন প্রণোদনা হিসাবে বিতরণ করলে সরিষার আবাদ আরও বেড়ে যাবে। পুটিজানা ইউনিয়নের পাটুলি গ্রামের সরিষা চাষি সোহেল বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছর দুই একর জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। একর প্রতি প্রায় ৭ হাজার ৫শ টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। সরকার খামার যান্ত্রিককরণের আওতায় মাঠ পর্যায়ে তেল মাড়াই মেশিন সরবরাহ করলে ভ্রমমাণ মেশিনের মাধ্যমে চাষিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সরিষা তেলের প্রতি আকৃষ্ট হবে। ফলে চাষিরা তাদের সরিষার ন্যায্য দাম পেতে পারে। আছিম পাটুলী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফখর উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। কৃষক সয়াবিন তেল বর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমার টিম কাজ করছে। বাজারে সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গত মৌসুমে সরিষার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এবারও সরিষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরিষা গাছ দেখে বোঝা যাচ্ছে ফলন ভালো হবে। তেল জাতীয় ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তেরটি ইউনিয়নে রবি মৌসুমে প্রণোদনার কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষা বীজ,সার দিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগন কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করছেন।
###