বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি রবিবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের মধ্যম শমশেরনগর চৌকারহাট মাঠে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল মধ্যম শমশের নগর আদর্শ স্পোর্টিং ক্লাব। এটি তাদের প্রতিবছরের নিয়মিত আয়োজনেরই একটি অংশ।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ‘ঘোড়া’ কবিতার কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে; প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন এখনো ঘাসের লোভে চরে…’ না, এ ঘোড়াগুলো মহীনের নয়, কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরেও তারা ঘাসের লোভে আসেনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রং ও আকারের প্রায় অর্ধশত ঘোড়া সমবেত হয়েছিল একটি স্থানে। এগুলো এসেছিল জয়-পরাজয়ের খেলায়। পৌষের কুয়াশামাখা শীতের দুপুর থেকে বিকেলকে দৌঁড়ে দৌঁড়ে রঙিন করেছে, উষ্ণ করেছে এই ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারের দল।
রবিবার (১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় মধ্যম শমশের নগর চৌকারহাট মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষে ভরা পুরো মাঠ। মাঠের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাল, কালো, সাদাসহ ছোট-বড় অনেক ঘোড়া। সেগুলো ঘিরে আছেন ঘোড়ার মালিক, সহযোগী ও শিশু-কিশোর ঘোড়সওয়ারেরা। ঘোড়াগুলোকে নানাভাবে যতœ করা হচ্ছে। কেউ ঘোড়ার পিঠ-ঘাড় ঘষে দিচ্ছেন। কেউ পা টেনে দিচ্ছেন। ঘোড়াগুলো এসেছে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। প্রতিটি ঘোড়ার সঙ্গে একজন করে শিশু-কিশোর ঘোড়সওয়ার আছে।
ঘোড়াঘাটের তৃতীয় শ্রেণির শিশু ঘোড়সাওয়ার জান্নাতুন ফেরদৌস বলে, ‘ছোট থেকেই ধরে ঘোড়া দৌঁড়াই। ঘোড়া দৌঁড়াইতে আরাম লাগে। এখন আমি ঘোড়া থেকে পড়ি না।’
ঘোড়ার মালিকরা বলেন বিভিন্ন স্থানে হওয়া প্রতিযোগিতায় ঘোড়া নিয়ে যাই। খেলায় হারা-জিতা আছে। খালি জিতার জন্য দৌঁড় প্রতিযোগিতায় আসি না।
আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিবনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাইদুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছামেদুল ইসলাম মাস্টার, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় এ, বি এবং সি এই তিন ভাগে ঘোড়দৌঁড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষে বিজয়ী ঘোড়সওয়ারদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিদ্বয়।
আয়োজকরা বলেন বলেন, ‘এই ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে, নতুন প্রজন্ম ঘোড়দৌঁড় কী, তা জানে না। আমরা ছোটবেলায় ঘোড়দৌঁড় দেখেছি। এটি গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। এটা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। আমরা তরুণ ও শিশুদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া এ খেলাকে পরিচিত করাতে চাইছি। এ ছাড়া প্রতি নতুন বছরের প্রথম দিনটাও যেন আনন্দ-উল্লাস করে কাটে, সে ব্যবস্থা করেছি।’