দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি, রেলস্টেশনের আধুনিকায়ণ ও ভারতীয় আমদানিকৃত পণ্যবাহী র্যাক খালাসের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। একপর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে রেললাইনের উপর শুয়ে পড়েন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় স্টেশনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও নাগরিক কমিটির আয়োজনে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের শত-শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে মানববন্ধন চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা রেলস্টেশনে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা নীলফামারীগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেন। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে রেললাইনের উপর শুয়ে পড়েন। এতে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও নীলফামারী রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দাবিগুলোর বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ তুলে নেওয়া হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও হিলি-হাকিমপুর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল আলম মণ্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, সমাজসেবী মিশর উদ্দীন ও এনামুল খান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯৫৩ সালে হিলি চেকপোস্ট ও ১৯৮৬ সালে হিলি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় হিলি রেলস্টেশন ব্যবহার করে পাসপোর্টযাত্রীরা ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে আসছেন। এছাড়া প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এখান থেকে সরকার প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে থাকেন।
তারা বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। এসব কারণে হিলি দেশের মধ্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। কিন্তু তারপরেও হিলিবাসীসহ আশপাশের উপজেলার মানুষজন, ব্যবসায়ী, পাসপোর্টযাত্রী, রোগী, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হিলি রেলস্টেশনে ট্রেন না থামার কারণে নাগরিক সুবিধা ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র আসা-যাওয়ার পথে হিলি রেলস্টেশনে একমুখী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ও লোকাল রকেট মেইল থামে; যা সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অন্তরায়।
বক্তারা আরও বলেন, ২০১৮ সালে সংসদে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক হিলি রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন ও সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় রেলমন্ত্রী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও গত ৫ বছরেও হিলি রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন ও সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং রেলস্টেশনের সুযোগ সুবিধা ও জনবল প্রত্যাহার করে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর রেলস্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে; যা হিলিবাসীর মনে কষ্টের সঞ্চার হয়েছে।