বছরের পর বছর ধরে যেখানে ঝুলে ছিলো ভূমি জটিলতার মামলা। যুগ পেরিয়ে গেলেও নিস্পত্তি হয়নি মামলার, দূর হয়নি হয়রানী ও দূর্ভোগের। তবে এটি ছিলো সাড়ে তিন মাস আগের পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের চিত্র। মাত্র সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে বদলে গেছে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের চিত্র। পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান পাল্টে দিলেন এমন চিত্র।
সম্প্রতি নগরীর পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সত্তোরোর্ধ্ব জাহাঙ্গীর আলম। এক সময় থাকতেন বিদেশে। নিজের এলাকায় তিনি ২৪ একর জমি কিনেন। কিন্তু করণিকের ভুলের কারণে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রায় এক যুগ। পতেঙ্গা সার্কেলে মিস মামলা করেও তিনি দ্রুত সমাধান পাননি। কয়েক মাস আগে তার দীর্ঘদিনের সমস্যাটি তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এক মাসের মধ্যেই সুরাহা করে দিয়েছেন সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি)। শুধু জাহাঙ্গীর আলম নন, পতেঙ্গার এমন অনেক মানুষের জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের সমস্যার দ্রুত সমাধান দিচ্ছেন সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান। আগে যেখানে দালালের দৌরাত্ম্যে অসহায় ছিল সাধারণ জনতা, সেখানে দালাল নির্মূলে এখন সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারছেন তার সঙ্গে। প্রতি সপ্তাহে আয়োজন করা হচ্ছে গণশুনানিও। এছাড়া গত তিন মাসে ৩৪ মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১টি, বাকি তিনটি এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান এরমধ্যে পতেঙ্গা সার্কেলের নিজস্ব ভবনের জন্য আবেদনও করেছেন।
জানা গেছে, মিজানুর রহমান পতেঙ্গা সার্কেলে যোগ দেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা রুজু হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ মামলার নিষ্পত্তিও হয়েছে, বাকি তিনটি চলমান। তিনি চালু করেছেন ঘরে বসে অনলাইনে খাজনা দেওয়া ও নামজারির আবেদন সুবিধা। সপ্তাহের প্রতি বুধবার চালু করেছেন গণশুনানি। ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ভুমি অফিসের সামনে সাঁটানো হয়েছে সিটিজেন চার্টার, সৌন্দর্যবর্ধনে টবে লাগানো হয়েছে নানান জাতের গাছের চারা।
সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করণিকের ভুল, নামজারি, মিস কেইস ছাড়াও নানান কারণে ভূমি সংক্রান্ত মামলার সমাধান হচ্ছে খুবই দ্রুত সময়ে। দালাল ছাড়াই নিসংকোচে মানুষ সমস্যা নিয়ে সরাসরি এসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সুনির্দিষ্ট কাজ ছাড়া অযথা ভূমি অফিসে কেউ ঘুরাফেরা করলে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া একাধিক মামলা হলে উভয়পক্ষকে ডাকা হয় এবং প্রয়োজনে সপ্তাহে তিনদিন গণশুনানি হয়। পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, বতর্মান সরকার ভূমিসেবা সহজ করতে ডিজিটাল ভূমিসেবাসহ নানান উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভূমি সেবাসমূহ সেবাগ্রহীতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সমস্যার সমাধান পেতে আমার দরজা সব সময় খোলা। বিধি বর্হিভুত বা কোন অন্যায় আবদারের কাছে আমি মাথা নত করি না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের বিষয়ে এই মুহুর্তে কোনো মন্তব্য করবো না। আমি নিজেই সরেজমিন পতেঙ্গা ভূমি অফিস ভিজিট করবো, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবো। তবে কোনো এসিল্যান্ড ভালো কাজ করলে, ভালো লাগে।‘
///