করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আজিজুর রহমানের চাচাত ভাই হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট (বুধবার) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আজিজুর রহমানকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। সেদিনই নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়।
উল্লেখ্য, বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙে সিলেট কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন-পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তিনি।
তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আজিজুর রহমান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
চলতি বছরে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আজিজুর রহমান।