খুলনার রূপসা উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন লিলিয়া খাতুন। ২০১৩ সালে নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকায় বাড়ি করার জন্য রূপালী ব্যাংকের খুলনা সদর শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই সময় পরিচয় হয় ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. বায়েজিদ মোল্লার সঙ্গে। ২০১৫ সালে আবার ঋণ নেওয়ার জন্য ওই শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন লিলিয়া খাতুন। তখন বায়েজিদ মোল্লা খুলনায় বসে কুষ্টিয়া করপোরেট শাখা থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এ জন্য তিনি লিলিয়া খাতুনের কাছ থেকে জমা রাখেন পূবালী ব্যাংকের পাঁচটি ব্ল্যাংক চেক (যে চেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকে না) ও ২০টি চেকের পাতা। লিলিয়া খাতুন ২০১৭ সালের দিকে জানতে পারেন কুষ্টিয়ার ওই শাখা থেকে তাঁর নামে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়েছে। লিলিয়া খাতুন এর প্রতিবাদ করায় ব্যাংকে জমা রাখা পূবালী ব্যাংকের চারটি চেক দিয়ে লালমনিরহাট, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের তিন ব্যক্তি তাঁর নামে প্রতারণার মামলা দিয়েছেন। এ ছাড়া বায়েজিদ মোল্লা আরও একটি মামলা দিয়েছেন। বাগেরহাটের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন দেবশংকর বিশ্বাস। ২০১৫ সালে বাবার চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা ঋণ পেতে যোগাযোগ করেন খুলনা সদর শাখার ব্যবস্থাপক বায়েজিদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি দেবশংকরকে রূপালী ব্যাংকের কুষ্টিয়া করপোরেট শাখা থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেন। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে জমা নেওয়া হয় সাউথইস্ট ব্যাংকের চারটি, সোনালী ব্যাংকের চারটি ও রূপালী ব্যাংকের কুষ্টিয়া করপোরেট শাখার অ্যাকাউন্টের ২০টি চেক। পরে দেবশংকরের নামে তিন ব্যক্তি ফরিদপুর আমলি আদালতে দুটি প্রতারণা ও একটি মানহানির মামলা দিয়েছেন। লিলিয়া খাতুন, দেবশংকরের মতো প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ব্যক্তি খুলনা প্রেসক্লাবে হাজির হয়ে বায়েজিদ মোল্লার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে হাজির হওয়া ব্যক্তিরা বায়েজিদ মোল্লার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মামলার আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বলেন, ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনে সরল বিশ্বাসে তাঁরা বেশি চেক জমা রেখেছিলেন। কিন্তু মামলা হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁদের নামে ব্যাংকে তিন-চারটির বেশি চেক নেই। বাকি চেকগুলো কোথায় গেছে বা অন্যরা কী করে ওই চেক দিয়ে মামলা দিচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি। এখন একের পর এক মানহানি, প্রতারণার মামলায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় হাজিরা দিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ‘বায়েজিদ মোল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। সর্বশেষ আদালতে করা একটি জালিয়াতি মামলায় গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি রূপালী ব্যাংকের ফরিদপুরের জোনাল অফিসে কর্মরত ছিলেন। এখন বায়েজিদ মোল্লা কারাগারে। তাঁরা বায়েজিদ মোল্লার এসব অপকর্মের তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।