কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ কার্যালয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় কর্তৃক খানজাহান আলী থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত ৮ জন আসামীকে গ্রেফতারের পর এবং ভিকটিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ইজিবাইকের অংশ বিশেষ উদ্ধার সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে গতকাল এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক মহোদয় বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর রয়েছে। তিনি আরোও বলেন, আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদেরকে ও গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। গত আগস্ট ২০২৩ থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩২ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল, ককটেল, গান পাউডার, স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি তার বক্তব্যে আরোও বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে রাত্রে অনুমান খানজাহান আলী থানাধীন আটরা পশ্চিম পাড়া নতুন রেল লাইনের পূর্ব পাশে জনৈক সাইফুল ইসলামের সরিষা ক্ষেত হইতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ অজ্ঞাত একটি মৃত দেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি লোকমুখে শুনে রুপসা মাস্টার পাড়া এলাকা থেকে রাণী বেগম নামক একজন মহিলা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার স্বামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৬) বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিচয় মোঃ আবুল কালাম আজাদ(৫৬), পিতা-মৃত ইসহাক মোল্লা, মাতা-কুলসুম বেগম, সাং-দত্তের পশুরি বুনিয়া, পোস্ট- বাটিখালঘাটা, থানা-কাঠালিয়া, জেলা-ঝালকাঠি, এ/পি সাং-রুপসা মাষ্টারপাড়া,বর্তমান তিনি খুলনার খেয়াউদ্দিন ডাক্তারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরী বলে জানা যায়। এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম খানজাহান আলী থানায় এসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি এজাহার দায়ের করলে বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে অফিসার ইনচার্জ খানজাহান আলী থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০৮/০১/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। পরবর্তীতে খানজাহান আলী থানার একটি চৌকস তদন্ত টিমের নেতৃত্বে এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উদঘাটনের পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের গ্রফতার করা হয়। প্রকাশ থাকে যে, এই মামলার মূল আসামী ভিকটিমের ইজিবাইকটিও ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে পর্যবেক্ষণ করে আসছিলো এবং অন্যান্য আসামীদের যোগসাজসে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ৫ জানুয়ারি ২০২৪ ভিকটিমকে রুপসা ঘাট থেকে ইজিবাইকটি রিজার্ভ ভাড়া করে আটরা-আফিল গেট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক অবস্থানরত প্রধান আসামী মনির হাওলাদার তার স্ত্রীকে আনার কথা বলে মশিয়ালি নামক স্থানে। উক্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসামীরা বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক চালক ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে থামায় এবং হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ী থেকে ফেলে দিয়ে অন্ধকারের ভিতর প্রধান আসামী মনির হাওলাদারসহ আসামী মোঃ রনি শেখ, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফোরকান হোসেন তোহান, রিয়াদ লস্কর রিয়াদ ও সৈয়দ মোহন হোসেন ওরফে মোহন মিলে এই হত্যাযজ্ঞে শামিল হয় এবং তোহান ও রিয়াদ মাফলার দিয়ে ভিকটিমের নাক-মুখে প্যাচিয়ে এবং রনি শেখ ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভিকটিমের হাত ধরে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে। অতঃপর মনির হাওলাদার ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাত-পা বেঁধে সরিষা ক্ষেতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি অন্য কোথাও বিক্রি করলেও ধরা পড়বে বিধায় ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ পার্ট পার্ট করে খুলে মালিক সেজে আসামী সৈয়দ মোহন হোসেন ওরফে মোহন গ্রেফতারকৃত অন্য আসামী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ মোঃ আলামিন কাজী আলামিন এর নিকট ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে। অত্র মামলাটির তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। পরবর্তীতে সে ইজিবাইকটি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালাতো। সে অত্যন্ত দীনহীন ও মানবিক হওয়ার দায়িত্ব বোধ থেকে আমারা পাশে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানবিক ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সেই ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতে কেএমপি’র পক্ষ থেকে গতকাল নিহত ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগমকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য একটি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয। এ সময়ে অত্র মামলার বাদী ও ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম মহানগরী পুলিশের নিকট হতে ১টি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ এবং নতুনভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় জন্য খুলনার মান্যবর পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও, ভিকটিমের স্ত্রী এই হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল আসামি গ্রেফতার হওয়ায় জন্য ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। এ সময়ে কেএমপি’র ডেপুটি কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নিত প্রাপ্ত এম এম,শাকিলুজ্জামান, অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন পিপিএম – সেবা , সহকারী পুলিশ কমিশনার ( স্টাফ অফিসার টু পিসি) ইমদাদুল হক, সহকারী পুলিশ কমিশনার ( দৌলতপুর জোন ) মোঃ আবুল বাশার, খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক, এবং পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত পলাশ কুমার দাসসহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।