ভাঙনের কবলে পড়েছে খুলনার নদীবন্দর। বর্তমানে ২০০ ফুটের বেশি স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে ভাঙন। ফলে জেটিতে নিরাপদে জাহাজ ও কার্গো ভিড়তে পারছে না। ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের পণ্যখালাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শতকের ষাটের দশকে খুলনা মহানগরীর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা ভৈরব নদের পাড়ে গড়ে ওঠে নদীবন্দর এলাকা। একই স্থানে নৌ, সড়ক ও রেল-যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় এটি দক্ষিণ-পশ্চািঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর হয়ে ওঠে। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য এনে এখানে খালাস করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে বন্দরটির পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকা ভাঙনের মুখে পড়ে। ভাঙন প্রতিরোধে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় করে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু এর সুফল মেলেনি। গত বছর আবার একই স্থানে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে বর্তমানে ২০০ ফুটের বেশি স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে ভাঙন। ফলে জেটিতে নিরাপদে জাহাজ ও কার্গো ভিড়তে পারছে না। পণ্য খালাসে জাহাজের পাশাপাশি ঝুঁকি বাড়ছে শ্রমিকদের। এদিকে খুলনা নদীবন্দরে পণ্য খালাসের ধীরগতির কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় থাকা বিদেশি জাহাজকে নির্ধারিত সময়ের বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত খুলনা নদীবন্দরের জেটি সংস্কার ও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। বন্দরের শ্রমিকরা জানান, ভাঙনের কারণে জাহাজ নোঙরে ভিড়তে পারে না। জাহাজ থাকে নদীর মাঝখানে। এ কারণে দুটি সিঁড়ি দিতে হয়। মালামাল লোড-আনলোডের সময় সিঁড়ি দোলে। অনেক সময় শ্রমিকরা পা পিছলে সিঁড়ি থেকে নদীতে পড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জাহাজ ভিড়িয়ে যদি মাল দ্রুত খালাস করতে না পারি, তাহলে মোংলা বন্দরে মাদার ভ্যাসেল ড্যামেজ হবে। বন্দরের পাঁচ নম্বর ঘাটটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দিচ্ছে না। খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের কোষাধ্যক্ষ চৌধুরী মিনহাজ-উজ জামান সজল বলেন, বন্দরের পাঁচ নম্বর ঘাটের বিরাট একটি অংশ শিপ পাইলিং। সেটা ধসে গেছে। ওপেন ইয়ার্ডে আরসিসি ঢালাই নেই। কানেকটিং রোডেরও বেহাল দশা। এখানের হাইমাশ লাইটিং খুবই জরুরি। পাশাপাশি বর্তমান সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে ক্রেন থাকা উচিত। সেটাও নেই। সব মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নদীবন্দরের পাঁচ নম্বর ঘাটের হযবরল অবস্থা। তবে ভাঙন প্রতিরোধ ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা চলছে দাবি করে খুলনা বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে সিট পাইলিং আছে। তবে, লোনা পানির কারণে কিছু কিছু জায়গায় মরিচা পড়ে গেছে এবং কিছু কিছু জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে এখানে কাজ করা হবে।