ছাত্ররাজনীতির সুলতান দীর্ঘদিন আওয়ামী সালতানাতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ওয়ান ইলেভেনের পর সেই সালতানাতের আকাশে ঝুলে থাকা এক তারকা রাজনীতিবিদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বোা যায় বর্ণাঢ্য ছাত্ররাজনীতির গৌরব অলংকারে আচ্ছাদিত এক জীবন, পুরোদস্তুর ভুলে ভরা এক রাজনীতিবিদ। ঘটনাবহুল ওয়ান ইলেভেনে তারকাবহুল অনেক রাজনীতিবিদের জীবন যেমন জটিল হয়ে উঠে ছিলো , অনেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন রাজনীতির মূলশ্রোত থেকে। তেমনি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের রাজনৈতিক জীবনও লোভ লালসায় পতনের ঘন্টা ঝুলে যায় গলায় সেই ঘন্ঠির ভারে ন্যুহ্য অনুশোচনায় কাতর এক অযুত সম্ভাবনাময় তারকা রাজনীতিবিদের। ওয়ান ইলেভেনের কুশিলবরা বিদায় নিলে সুলতান মনসুরেরা হয়ে পড়েন একা নিঃসঙ্গ। সর্বত্র নেমে আসে অবহেলা অনাদর গুরুত্ব হারান দলে, হয়ে পড়েন অচ্যুত । পুঞ্জিভুত একবুক অভিমান নিয়ে এক সময় নিজেও দল থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন । দূরে সরে থাকলেও দলের কর্মকান্ডে ফেরার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন বহুবার নানাভাবে এ ক’বছর। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা সুলতান মনসুর শেখ হাসিনা তার প্রতি যে আস্থা, বিশ্বাস এবং পরম স্নেহ মমতা দেখিয়েছিলেন তার প্রতিদান তিনি দিতে পারেননি। ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার যে ফর্মুলা, সেই ফর্মুলা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা ক্রিয়াশীল ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। অথচ হাসিনা নিজের হাতে তাকে গড়ে তুলেছিলেন এবং শেখ হাসিনার কারণেই ডাকসুর নির্বাচনে তিনি সহ সভাপতি পদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জয়ী হয়েছিলেন। ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির পথ বেয়ে আসীন হয়েছিলেন আওয়ামীলীগের মূল রাজনীতিতে ।কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন মনসুর। এক সময় মনে করা হতো যে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর হবেন আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর অতি লোভে পড়ে নিজেই নিজের ক্যারিয়ারের অন্তরায় হয়ে উঠেছিলেন। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী অনেকে ক্ষমা পেলেও দলের প্রধান সুনতান মনসুরের প্রতি ছিলেন ল খড়গহস্ত। মনসুর বার বার ক্ষমা ভিক্ষার পরও সদয় ছিলেননা দলনেত্রী। তবে বহুদিন পর ক্ষমা করেছিলেন সঙ্গে এও বলে রেখে ছিলেন ক্ষমা করে দিলাম তবে ভুলবনা। বহু বছর ভুলেননি এরপর হতাশ অধৈর্য্য সুলতান মনসুর আওয়ামীলীগ বিরেধী শিবিরে ভিড়ে যান আরো কিছু বাস্তুচ্যুত রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কাদের সিদ্দিকী মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকের সঙ্গে বিএনপি ঘরণার সকল অনুষ্টান সভা সমাবেশে এঁরা কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হন। বাঘে ধরলেও ছাড়ে কিন্তু হাসিনায় ধরলে ছাড়েনা। আশাবাদীরা বলছেন অবস্থাদৃষ্টে মনে করা যেতে পারে বহুদিন পর বোধহয় ছেড়ে দিয়েছেন ! ১লা সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সমাবেশে সুলতান মনসুরের উপস্থিতি থেকে রাজনীতির নতুন আলোচনা সমালোচনা এমনকি চুলচেরা বিশ্লেষণ রাজপথ অফিস আদালত থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে গিয়ে গড়ায় খুব শীঘ্রই কি ফিরছেন সুলতান আপন আলয়? সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আওয়ামী লীগে ফিরছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি (সুলতান মনসুর) আওয়ামী লীগে ফিরছেন কিনা এটি তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়। এটি তার নিজস্ব চিন্তা-ধারণা, এটি নিয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। আর এ ধরনের (আওয়ামী লীগে ফেরা) কোনো প্রস্তাব আমি দিতে যাব কেন? তারও বিবেক আছে- রাজনীতি করে। কাজেই সে তার বিবেক থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা কেন তাকে ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) করব।।বিশ্লেষকরা বলছেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা বলার নমীনীয়তায় বুঝা কঠিন নয় নির্বাচনের আগে আগেই ফিরছেন সুলতান। প্রায় পাঁচ দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসা ডাকসাইটে নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ১৯৯৬ সালে প্রথম নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে আসেন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার – ২ আসন থেকে বিজয়ী হন। কিন্তু ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ২০১০ সাল থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হলেও ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে আবির্ভুত হয়ে মূলসারির নেতা হিসেবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে জয়ি হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি এ নিয়ে যখন সংবাদপত্র লেখালেখি এবং ঘরোয়া বৈঠকগুলোতে কানাঘুষা চলছে।তবে আরো একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় এখনো দলে ফেরার সিদ্ধান্তটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। রাজনৈতিক মেরুকরণ, দলে সম্মানজনক অবস্থানসহ নানা হিসাব নিকাশ করে তবেই ফেরা বেশ সময় সাপেক্ষ। তবে এ ব্যাপারে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান এসব ব্যাপারে আমি কিছুই জানি কে বা কারা কি বলছে আমি জানিনা, ভালো থেকো, ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রাখেন তিনি। এদিকে ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের মহা সমাবেশে সুলতান মনসুরের মঞ্চে উপস্থিতি সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুলতানই আসছেন নৌকা নিয়ে এমনতর আশাবাদী করে তুলেছে তাঁর সংসদীয় আসনের কর্মী সমর্থকদের। অন্যদিকে স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কিছু রিএ্যাকশনও দেখা গেছে গত নির্বাচনে জয়ের পর থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন মনসুর। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ কমেছে, সাধারণ ভোটারের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত নেই অনেক ভোটাররা ভুলেই গেছেন সুলতান মনসুরের নাম। বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তাঁর সংসদীয় আসনের সাধারণ মানুষ থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে অনেকে চান রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা থাকবেন,তা না হলে রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যাবে।সব কিছু ছাপিয়ে সুলতান মনসুর এক আমুল রাজনীতিবিদ ৭৫’এর বঙ্গবন্ধু হত্যার জীবন বাজী রাখা প্রতিরোধ যোদ্ধা আওয়ামীগ নীতিনির্ধারকেরা সেটাওতো মনে রাখা দরকার।