গাজীপুরে বলাৎকারের সময় চিৎকার করায় এক শিশুকে হত্যা করেছেন নাসির মিয়া (২৮) নামের এক যুবক। এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নাসির মিয়া নোয়াখালীর কবিরহাট থানার সোনাপুর জমিদারহাট গ্রামের পাকমুন্সিহাট এলাকার কামাল মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরের পুবাইল থানার মাজুখানবাগের টেক এলাকার সাঈদ আহমেদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম শিহাব হোসেন পুবাইল থানার মাজুখান উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুয়েলের ছেলে। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের পুবাইল এলাকায় ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে দুপুরে ছয় বছর বয়সী শিশু শিহাব নিখোঁজ হয়। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন বাড়ির অদূরে মাজুখান গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকা থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের নানি নাছিমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পুবাইল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মহানগরীর মাজুখান উত্তরপাড়ায় মো. ফারুকের মুরগির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন নাসির মিয়া। মালিক ফারুক দোকানে সময় দিতেন না। নাসির নিজেই মুরগি ও মুরগির খাবার বেচাকেনা করতেন। ফিড খেয়ে ফেলার সময় মুরগি তাড়ানোর জন্য দোকানদার নাসির খেলনা পিস্তল দিয়ে মুরগিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেন। পাশের গলির জুয়েলের ছেলে শিহাব মাঝে মধ্যে তার কাছে দোকানে আসতো এবং খেলনা পিস্তলের ছোড়া গুলি কুড়িয়ে আনতো। নাসির মাঝে মধ্যে শিহাবকে চিপস কিনে দিতেন। শিশুটি নাসিরকে ‘মুরগি চাচ্চু’ বলে ডাকতো। এভাবে শিশুটির সঙ্গে নাসিরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসামি নাসির একই মহল্লায় ইমনদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ২৫ নভেম্বর বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে পর্নো ছবি দেখছিলেন নাসির। দুপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় শিশু শিহাব তার কক্ষে যায়। তখন নাসিরের মাথায় বিকৃত চিন্তা আসে এবং শিহাবকে বলাৎকারের চেষ্টা করেন। এসময় শিশুটি চিৎকার দেয়। পরে নাসির মুখ চেপে ধরলে শিশুটি মারা যায়। পিবিআই আরও জানায়, শিশু শিহাবের মরদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে বাইরে চলে যান নাসির। পরে ভোরের দিকে মরদেহ সালাম মুন্সির বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যান। ঘটনার তিন দিন পরে নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যান। দুদিন পরে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসেন। এর এক সপ্তাহ পর নাসির ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় চলে যান। মরদেহ উদ্ধারের পর নিহত শিহাবের দাদি নাছিমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পুবাইল থানায় মামলা করেন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, আসামি নাসির বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে পর্নো ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে শিশু শিহাবকে বলাৎকারের চেষ্টাকালে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ড ঘটান। তিনি আরও বলেন, শিশু শিহাব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) মাজুখান এলাকা থেকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির মিয়া এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।