বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গত রোববার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন বরিশালের সাংবাদিক মাসুদ রানা (৩৭)। লিখেছিলেন, ‘২০২৩ সালের প্রথম ছবি।’ ঘন কুয়াশায় মুখভার প্রকৃতির মধ্যে তাঁর মুখ ছিল হাসিমাখা। কে জানত, এটাই ছিল তাঁর শেষ ছবি। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মাসুদ রানা নিহত হওয়ার পর সে ছবি দেখে তাঁর বন্ধুদের আক্ষেপ যেন থামছেই না।
সহকর্মী সাংবাদিক প্রশান্ত কুন্ডু বলেন, মাসুদ রানার মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়। মাসুদ রানা ছিলেন পরোপকারী। সব সময় বন্ধুদের প্রয়োজনে এগিয়ে যেতেন। তাঁর জীবনও অন্যের সহায়তা করতে গিয়ে চলে গেল।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি ‘আমাদের সেবা’ নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান আছে মাসুদ রানার। সেই প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্রী লুৎফুন্নাহার লিমার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে প্রাণ গেল তাঁর। সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর বরিশালে পৌঁছানোর পর সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাসুদ রানা দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল অফিস প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে, দৈনিক আমাদের নতুন সময় ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও বরিশাল থেকে প্রকাশিত ‘দক্ষিণ বাংলা’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদনা করতেন তিনি।
তাঁর বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামে। তিনি বরিশাল নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় সস্ত্রীক বসবাস করতেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লুৎফুন্নাহার লিমার মা জাহানারা বেগম অসুস্থ ছিলেন। লিমার বাবা লতিফ মল্লিক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবার সঙ্গে লিমা সেখানে থাকেন। তাঁর মা জাহানারা বেগম বরিশাল নগরের কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকায় বসবাস করতেন। ছয়–সাত মাস পরপর লিমা দেশে আসতেন ও মায়ের চিকিৎসা করাতেন। সোমবার দিবাগত রাতে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লিমা মাসুদ রানাকে তাঁদের সঙ্গে যেতে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হন। দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে জাজিরায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্সের ছয় যাত্রী নিহত হন। তাঁরা হলেন জাহানারা বেগম (৫৫), লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০), তাঁদের স্বজন ফজলে রাব্বি (২৮) এবং চালক রবিউল ও রবিউলের সহকারী জিলানি (২৮) ও সাংবাদিক মাসুদ রানা (৩৭)।
আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম বলেন, মাসুদ রানার গ্রামে মা-বাবা আছেন। তাঁরা দুই ভাই ও এক বোন। মাসুদই সবার ছোট। তাঁর গ্রামের বাড়িতে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে দাফন করা হয়।