প্রথম চেতেশ্বর পূজারার দুরন্ত ও ঋষভ পন্তের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং সিডনি টেস্টে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল। কিন্তু কম সময়ের ব্যবধানে এই দু’জনকে তুলে নিয়ে অজি বোলাররা ভারতকে জোড়া ধাক্কা দিয়েছিল। তবে হনুমা বিহারী ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ে সিডনি টেস্টে ড্র করতে সক্ষম হয় ভারত। এতে সিরিজে ১-১ সমতা এল। তবে এই ড্র ভারতের জন্য জয়ের সমান। কেননা, অস্ট্রেলিয়া ধরে-ই নিয়েছিল টেস্টের পঞ্চম দিন অনায়েসে ভারতের অবশিষ্ট ৮ উইকেট তারা নিতে পারবে। কিন্তু পূজারা, পন্ত, হনুমা ও অশ্বিনের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতে পারেননি কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউডরা। উল্টো ভারতের প্রতি আক্রমণে ম্যাচ হারের শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল অমিমাংসীত থেকেছে। তবে হাতের মুঠোয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ ড্র করে সিডনিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন রোহিত, রাহানে, জাদেজারা। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪০৭ রানের জবাবে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে তুলেছে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান। শেষ দিনে ভারত মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে পেয়েছে ২৩৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য ৮ উইকেট দরকার ছিল। কিন্তু তিন ক্যাচ মিসে বড় আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। লক্ষ্য ছিল পাহাড়সম। টেস্টের শেষ ম্যাচে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করার থেকে টিকে থাকার লড়াইটাই বেশি করেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ভারতের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্তের ভাবনা ছিল ভিন্ন। আগ্রাসন দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের আক্রমণ করে লক্ষ্যের পথে ছুটে যান। তুলোধুনো করেন স্পিনার নাথান লায়নকে। তাকে সঙ্গ দেন চতেশ্বর পূজারা। দুইজনের ১৪৮ রানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়া দিশেহারা। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো পান্ত নিজের ধৈর্য হারালেন। লায়নকে উইকেট উপহার দেন ৯৭ রানে। এর আগে ১১৮ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকান সিডনিতে। পূজারার ব্যাট থেকে এলো ৭৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস। এ ইনিংস খেলার পথে পূজারা পূর্ণ করেন ৬ হাজার রানের মাইলফলক। তাদের বিদায়ের পর হাল ধরেন অশ্বিন ও হনুমা। দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের একটাই কাজ। বল উইকেটে এলে হাল্কা ব্যাটে লাগাও। উইকেটের বাইরে গেলে ছেড়ে যাও। ২৫৮ বলের জুটিতে এই কাজটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সুযোগ দিয়েছিলেন স্বাগতিকদের। কিন্তু অসিরা ম্যাচ জেতার বাড়তি তাড়ণায় সহজ কাজগুলো করতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন হনুমা। রান নেওয়া যেন ভুলেই গিয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। হ্যামস্ট্রিং চোট নিয়ে ব্যাটিং করা হনুমা ১৬১ বলে করেন মাত্র ২৩ রান। অশ্বিনও কম যাননি! ১২৮ বলে করেন ৩৯ রান। তাতে ম্যাচ বেঁচে যায় সহজেই। দু’জনের অপ্রতিরোধ্য ইনিংসগুলো শুধু ম্যাচ-ই বাঁচায়নি, সেঞ্চুরির চেয়েও দামি। তাদেরকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন রবিন্দ্রীর জাদেজা। ইনজেকশন নিয়ে ব্যাটিং করার ঘোষণা দেওয়া জাদেজাকে নামতে যে হয়নি। শেষ ১০ ওভারে স্টার্ককে বোলিংয়ে এনেছিলেন পেইন। ইনিংসে উইকেটশূণ্য থাকা স্টার্ক পঞ্চম বলে সুযোগ তৈরি করেছিলেন। বাঁহাতি পেসারের বলে ড্রাইভ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হনুমা। বল মুঠোবন্দী করতে পারেননি অসি অধিনায়ক। এর আগে শততম ওভারে অশ্বিনের ক্যাচ এবং ৪০তম ওভারে পান্তের ক্যাচ ছাড়েন লায়ন। তিন ক্যাচ মিসে ম্যাচের ভাগ্য লিখা হয়ে যায় সহজেই। দিনের খেলার ১ ওভার আগে ড্র মেনে নেয় দুই দল। চতুর্থ ইনিংসে ১৩১ ওভার ব্যাটিং করে অনন্য নজির স্থাপন করেছে রাহানের দল। এশিয়ার কোনও দল প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ১৩১ ওভার ব্যাটিং করল। এর আগে তারাই ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৮৯.৫ ওভার ব্যাটিং করেছিল। এছাড়া ভারত ৪০ বছর পর চতুর্থ ইনিংসে এতো ওভার ব্যাটিং করল। দুই দলের চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ এ সমতায়। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট বাজেভাবে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে মেলবোর্নে বদলা নেয় ভারত। সিডনিতে এবার ড্র হল। ব্রিসবেন টেস্ট শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি। কারা জিতবে টেস্ট সিরিজ। জানতে অপেক্ষা করতে আরও কিছু সময়।