ইমরান খান কোথাও যাবেন, সেখানে ক্রিকেটের প্রসঙ্গ উঠবে না, সেটা কীভাবে হয়! পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা যখন সে দেশেরই প্রধানমন্ত্রী হন, তখন অবধারিতভাবেই ক্রিকেট হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় কূটনীতির অংশ। ইমরান এবার সেই ক্রিকেট কূটনীতি ব্যবহার করলেন প্রতিবেশী আফগানিস্তানে সরকারি সফরে গিয়ে। দুই দেশের শীতল সম্পর্কের বরফ গলাতে ক্রিকেটকেই অনুষঙ্গ বানিয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইমরান।পাকিস্তান-আফগানিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কে একধরনের অবিশ্বাস আছে চিরদিনই। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠার সময়ই পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। জাতিসংঘে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে একমাত্র ভোটদাতা দেশ ছিল আফগানিস্তান। পাকিস্তানের অভিযোগ, জন্মলগ্ন থেকেই সাবেক উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমানে খাইবার পাখতুনখাওয়া) পাঠান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অস্ত্র সরবরাহ করেছে আফগানিস্তান। ষাটের দশকে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ‘ডুরান্ড লাইন’ নিয়ে দুই দেশের বিরোধ সে সময়ের বড় ঘটনা।
সত্তরের দশকের শেষ দিকে সাবেক সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সশস্ত্র যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তারাই পরবর্তীকালে তালেবান হিসেবে পরিচিত হয়। আফগানিস্তানে উগ্রপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানের পেছনে আফগানরা সব সময়ই পাকিস্তানকে দায়ী করে।ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা সম্পর্কের এমন অবস্থায় ইমরান আফগানিস্তান সফর করলেন। ২০১৮ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর এটাই প্রথম আফগানিস্তান সফর। সফরে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে তাঁর। ইমরানের এই সফরে ছিল বরফ গলার বার্তা। তবে ইমরানের সঙ্গে আফগান ক্রিকেট দলের সাক্ষাৎ খুব সম্ভবত এ সফরের বড় উল্লেখযোগ্য বিষয়। আফগান ক্রিকেটারদের একটা বড় অংশেরই ক্রিকেটার হয়ে ওঠা পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন শুরু হলে বহু আফগানই সে সময় পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন।
আফগান ক্রিকেট দলকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি জানিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান। তিনি বলেছেন সফরের ব্যাপারে খুব শিগগির দুই ক্রিকেট বোর্ড আলোচনা শুরু করবে, ‘সফরের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে খুব শিগগির দুই ক্রিকেট বোর্ড আলোচনায় বসবে। আগামী বছর পাকিস্তান দলের অনেক খেলা। তারপরও আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের জন্য সময় বের করার চেষ্টা করা হবে। আফগানিস্তানের ক্রিকেট উন্নয়নে আমরা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছি এবং যখনই দরকার হয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তারা এখন আইসিসির পূর্ণ সদস্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমরা চাই এ সম্পর্ককে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।’ঐতিহ্যের বিচারে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তান ক্রিকেট তুলনায় না এলেও পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের বিচারেই এই দুই দেশের ক্রিকেট লড়াই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। গত বছর বিশ্বকাপে হেডিংলিতে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত জিতেছিল পাকিস্তান। তবে মাঠের লড়াই ছাপিয়েও ম্যাচটি উত্তেজনা ছড়িয়েছিল গ্যালারিতে, দুই দেশের দর্শকদের মধ্যে।