করোনার দোহাই দিয়ে কোন বিকল্প উদ্ভাবন না করেই সরকার অবিবেচকের মত ‘অটো পাস’ এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার একটা প্রয়াস মাত্র বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এসময় ৬ ছয় দফা উত্থাপন করেন সাবেক মন্ত্রী আ স ম রব। তিনি বলেন, পরীক্ষা দ্বারা মূল্যায়ন ছাড়া পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা কোনভাবেই বিশ্ব মানদণ্ডের নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয়। ‘অটো পাস’ ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও মনন বিকাশের অন্তরায়। ‘অটো পাস’ ছাত্র-ছাত্রীদের মনে আস্থার সংকট তৈরি করবে। সমাজে বৈষম্য আরো প্রকট হবে। এ ধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত জাতির জন্য আত্মঘাতী। বিদ্যমান ভয়ঙ্কর অপসংস্কৃতির সাথে অটো পাসের সংস্কৃতি নতুন মাত্রায় যোগ হয়ে চরম সামাজিক অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি করবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘোষণা করেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে। তখন সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সশরীরে সমবেত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার অটো পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হঠকারী ও হাস্যকর। যেখানে সারাদেশে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিংমল, যানবাহন পরিপূর্ণভাবে চালু করা হয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র পরীক্ষা না নেওয়ার পেছনে কোন দুরভিসন্ধি কাজ করছে কিনা তারও প্রশ্ন উঠেছে বলে মনে করেন আ স ম রব।
‘অটো পাস’ এর পরিবর্তিত পরীক্ষার ৬ দফা প্রস্তাবনা: ১) মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে (ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণী) সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে এবং প্রশ্নপত্রের পূর্ণমান অর্ধেক (৫০%) করে একটা পরীক্ষার ব্যবস্থার করা। ২) বিদ্যালয়ের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিরাপদ দূরত্বে আসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। ৩) প্রতিটা বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নপত্রের সেট তৈরী করে তার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন দিন পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। ৪) তেমনি ভাবে সিলেবাস এবং প্রশ্নপত্রের মান সংক্ষিপ্ত করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা গুলোতেও পরীক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্রের সেটের মাধ্যমে পরীক্ষা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরীক্ষার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। ৫) উপরোক্ত পরীক্ষাসমুহের সাথে যুক্ত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণ ও পরিচালনা করতে হবে। ৬) উপরোক্ত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ বাস্তবায়ন বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করে পরামর্শ গ্রহণ করা। আমরা আশা করছি দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকার অবিলম্বে উপরোক্ত ৬ দফা বাস্তবায়ন করে জাতি এবং জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।