আর মাত্র কয়েকদিন বাকি পবিত্র ঈদুল আযহার (কোরবানি ঈদ)। সবাই মার্কেটে ভিড় করছে নতুন পোশাক কোনাকাটা করার জন্য। এতিম শিশু নাঈম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। আমি এতিম। তাই কেউ আমার মত এতিমকে একটি নতুন পোশাকও কিনে দেয় না। পুরানো কাপড়ই ঈদের দিন আমাদের নতুন পোশাক। ডাল-ভাত এটাই আমাদের ঈদের খাবার। অভিন্ন কণ্ঠে কথা গুলো বলে বরিশাল নগরের পলাশপুর ৫নং ওয়াড ৭নং আর্দশ গুচ্ছগ্রাম এর রহমানিয়া কেরাতুল কোরআন হাফিজি মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিংটি শতাধিক এতিম শিশুরা।
মাদরাসাটি পরিচালনার জন্য কোন সহযোগিতা না পাওয়ায় ছাত্রদের নিয়ে দুঃচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মাদরাসার পরিচালক নুরুল ইসলাম ফিরোজী।
অন্যদিকে কান্না জড়িত কণ্ঠে এতিম শিশুরা বলে, আমাদের কারও মা নেই। আবার কারও বাবা নেই। তাই আমরা ঈদ কোরবানিতে নতুন পোশাকের মুখ দেখতে পাচ্ছিনা। আমাদের নতুন পোশাক দেওয়ার মত কেউ নেই। ধনী ব্যক্তিরা মাদরাসায় মাঝে মধ্যে খাবার, চাল-ডাল দিলেও ঈদ-কোরবানীতে নতুন পোশাক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক এতিম গরীব ছাত্র রয়েছে এই মাদরাসায়। কিন্তু তারা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে কোরবানিতে পোশাক ও খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতিম ছাত্ররা আরও বলে, আমরা গরীব ঘরের সন্তান দেখে আমাদের স্থান হয়েছে এতিমখানায়। আর যারা ধনী বংশে জম্ম নিয়েছে তারা চলে গাড়িতে। খাচ্ছে তিন বেলা পোলাও- মাংস-বিরানী। আমাদের এতিম খানায় এতিমের খোঁজ রাখেনা কেউ। ঈদ যায়, কোরবানি যায় কিন্তু আমাদের গায়ে থাকে পুরান জামা। যার বাবা মা আছে তারা একটা না একটা নতুন পোশাক পরে। আমাদের বাবা ও মা না থাকার কারণে আমাদের গায়ে উঠেনা নতুন পোশাক। মাদরাসায় কেউ যদি মাছ ও মাংস অথবা টাকা পায়সা দান করে তাহলে আমাদের মতো এতিমদের কপালে ভালো কিছু জুটে।
মাদ্রাসায় গিয়ে জানা গেছে, কয়েক জন এতিম শিশুর জীবন কাহিনীর গল্প। দেখা গেছে কি ভাবে তারা জীবন কাটাচ্ছে মাদরাসায়। এতিম শিশু সাব্বির, নাঈম, রুম্মান জানায়, আমার বাবা মা কেউই এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। শুধু রয়েছে নানি। তাই আমার ঠিকানা হয়েছে এতিম খানায়। মা-বাবা বেঁচে থাকলে নতুন পোশাক ও ভালো খাবার দিতেন আমাদের। নেই বলে তিন বেলার যখন যে খাবার পাই তাই খাই।
মাদরাসার পরিচালক নুরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, আগে মাদরাসার নিজস্ব জায়গা ছিলো না। ছাত্রদের থাকতে হতো ভাড়া বাড়িতে। সাংবাদিক ভাইরা বিভিন্ন পত্রিকায় মাদরাসার সমস্যাগুলো তুলে ধরায় চোখে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সাহেবের। পরে তিনি জেলা পরিষদের মাধ্যমে জমি কিনে ভবন করে দেন এতিম শিশুদের থাকার জন্য।
এ ছাড়াও বর্তমান জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান স্যার আমাদের মাদরাসায় সরেজমিনে এসে ছাত্রদের দুর্দশা দেখে ২ টন চাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক স্যার প্রায়ই মাদরাসার এতিম ছাত্রদের খোঁজ খবর নেন।
আল্লাহতালা তাদের বাঁচিয়ে রাখুক আমাদের মত এতিমদের জন্য। তিনি আরও বলেন, মাদরাসার উন্নয়ন কাজ চলছে। দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজন রড, সিমেন্ট, ইট,বালু। অর্থের অভাবে কাজ শেষ করতে পারছিনা। দ্বীন দরদী ভাই বোনদের খেদমতে এই যে মাদরাসায় চাল, কাপড়, অর্থ, যাকাত, ফিৎরা, মান্নত, কোরবানির চামড়া দান করলে ছাত্রদের নিয়ে মাদরাসাটি চালাতে বেশি একটা সমস্যা হত না। কিন্তু কোন ব্যক্তি এই এতিম শিশুগুলোর দিকে একটু নজর অথবা অর্থের সহযোগিতা করছেনা।
তবে বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে নানা সমস্যায় রয়েছে মাদরাসাটি। আগে কিছু ব্যক্তি মাঝে মাঝে চাল ডাল বিতরণ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে তারাই রয়েছেন সমস্যার মধ্যে। তাই বর্তমানে মাদরাসাটির এতিম শিশুরা রয়েছে কষ্টে। কয়েক মাস ধরে মাদরাসাটিতে কোন ধরনের অর্থ সহযোগিতা আসছে না। এবার কোরবানিতে এতিমদের নিয়ে কি খাওয়াবে তা নিয়ে সারাদিন চিন্তা করছে মাদরার পরিচালক।
তিনি আরো জানান, দানশীল ব্যক্তিরা এই মাদরাসার এতিম গরীব ছাত্রদের মুখে দিকে তাকিয়ে একটু দান করেন। কোরবানিতে এতিম ছাত্রদের খাবার, কাপড়, অর্থ অথবা কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। সহযোগিতা করার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বিকাশ নাম্বার ০১৯২৪৬১২৯১৮ অথবা মাদরাসার ব্যাংক একান্ট নাম্বারে পাঠাতে পারেন আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক বরিশাল শাখা অ্যাকাউন্ট ০১০১১২০১২৬৪৫৪। বরিশাল শাখা।